
বাংলা নিউজ ডেস্কঃ আগামী রোববার (২২ অক্টোবর) আওয়ামী লীগ তাদের সংসদীয় দলের সভা ডেকেছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সভাটা ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। নতুন রাষ্ট্রপতি নির্ধারণের জন্য সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বৈঠকে সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একক কর্তৃত্ব প্রদান করেন। তবে এবার সংসদের শেষ অধিবেশনের আগে এই সংসদীয় দলের বৈঠক নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। কেউ কেউ আভাস দিচ্ছেন যে, এই সংসদীয় দলের বৈঠকে নাটকীয় কোনো ঘোষণা আসবে।
বিরোধী দল যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ২৮ অক্টোবর থেকে আন্দোলনের মহাযাত্রার ঘোষণা দিয়েছে ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। চলতি মাসে বর্তমান সংসদের সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করবে। আর এই তফসিল ঘোষণার পর সংসদ অধিবেশন বসার কোন সুযোগ থাকবে না।
বিভিন্ন সূত্রগুলো নিশ্চিত করছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তাহলে এরকম সময় সংসদীয় দলের বৈঠক কেন? প্রধানমন্ত্রী এই সংসদীয় দলের সভায় কি নাটকীয় কোন ঘোষণা দিবেন? বিএনপির নিদলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়ন করতে গেলে সংসদে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আওয়ামী লীগের দুই তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা এ ধরনের ধারণাকে নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নই ওঠে না। এ বিষয়ে কোনো আপস হবে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। তবে এ সংসদীয় দলের সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে। এই সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল সংসদ সদস্যকে নির্বাচনের বার্তা দিবেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, এই সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে অনেক সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাবেন না— এমন একটি ইঙ্গিত দিয়ে যারা মনোনয়ন পাবেন না তারা যেন দলের বিরোধিতা না করেন, তারা যেন দলের প্রার্থীর জন্য অর্থাৎ যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন সেই নির্দেশনা দেবেন। বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের বিপরীতে সংগঠনকে শক্তিশালী করা, জনগণের কাছে যাওয়া, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের বার্তা গুলো জনগণকে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী যে সমস্ত সংসদ সদস্যরা এখনো এলাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন, যারা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না তাদের ব্যাপারেও কথাবার্তা বলতে পারেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, এই সংসদীয় বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সংসদ সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণার শুরু করার সবুজ সংকেত দেবেন।
আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সংসদীয় দলের বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হবে কিনা? তবে এই ব্যাপারে তিনি বলেছেন যে, নির্বাচনকালীন সরকার বলে সংবিধানে কিছু নেই। নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভার গঠন, আকার, প্রকৃতি কি ধরনের হবে তা একান্তই প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা। এটি প্রধানমন্ত্রী স্বীয় বিবেচনায় গ্রহণ করবেন। সংসদীয় বৈঠকে মোটেও এটি আলোচনা হবে না বলেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা আভাস দিয়েছেন। তবে আগামী ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে বিএনপি সহ বিভিন্ন বিরোধী দলগুলো যে নাশকতা করতে পারে এবং নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করতে পারে সে ব্যাপারে সংসদ সদস্যদেরকে এখন থেকেই তৎপর হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিবেন। এটাই সংসদীয় কমিটির বৈঠকের অন্যতম উপজীব্য বিষয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।