Site icon Doinik Bangla News

গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে হাম্প নাকি বাম্প?

উন্নত বিশ্বে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বসানো হয় অনুচ্চ ও প্রশস্ত গতিরোধক, যা স্পিড হাম্প নামে পরিচিত। এগুলো পার হওয়ার সময় যানবাহনে ধাক্কা লাগে না, কিন্তু গতি কমে যায়। আর পার্কিং এলাকায় বসানো হয় উঁচু ও অপ্রশস্ত গতিরোধক, যাকে বলে ‘স্পিড বাম্প’। ছোট-বড় বাহনে চেপে এমন গতিরোধক পার হতে গেলে ধাক্কা লাগে। দ্রুত পার হতে গেলে থাকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গতিরোধকগুলোর প্রায় সব কটিই উঁচু ও অপ্রশস্ত। এর অধিকাংশের গায়ের আবার রং নেই। নেই চালকদের জন্য সতর্কতামূলক নির্দেশনাও।

এমন অপ্রশস্ত গতিরোধকের কারণেই সম্প্রতি দুর্ঘটনার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাহিতুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘৫০-৬০ কিলোমিটার গতিতে যাচ্ছিলাম। রাতে কুয়াশা পড়ছিল। এ ছাড়া গতিরোধকে রংও ছিল না। এ কারণে সেটি চোখে পড়েনি। দুর্ঘটনায় আমার থুতনি ফেটে যায়।’

দুর্ঘটনাস্থল নূরজাহান রোডের মোহাম্মদপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে পরপর দুটি গতিরোধক। কয়েক ইঞ্চি উঁচু গতিরোধক দুটি খুবই সরু এবং একটিতেও রং নেই। এতে দূর থেকে দেখে গতিরোধক সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার উপায় নেই।

গতিরোধক দুটির পাশের একাধিক দোকানি বলেন, দিনে রাস্তাটি যানবাহনে পূর্ণ থাকে। তাই যানবাহনে গতিও কম থাকে। তাই দিনে তেমন সমস্যা হয় না। তবে রাতে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনা হয় বলে তাঁরা শুনেছেন।

এটি স্পিড হাম্প। কম উঁচু ও চওড়া বলে নিরাপদ l ছবি: সংগৃহীত
এটি স্পিড হাম্প। কম উঁচু ও চওড়া বলে নিরাপদ l ছবি: সংগৃহীত
একাধিক অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালক জানিয়েছেন, যাঁরা একটি রাস্তায় নিয়মিত চলাচল করেন, তাঁদের ওই রাস্তা সম্পর্কে ধারণা থাকে। ফলে গতিরোধকের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কম থাকে। কিন্তু নতুন কোনো রাস্তায় গিয়ে হঠাৎ গতিরোধকের সামনে পড়লে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।

বাইকারদের সংগঠন স্টার বাইকার্সের সদস্য মো. সিফাত উদ্দিন বলেন, নির্দেশনা ও রং না থাকলে হঠাৎ গতিরোধকের সামনে পড়তে হয়। শেষ মুহূর্তে আর ব্রেক করা যায় না। কারণ, হঠাৎ ব্রেক করলে পেছন থেকে অন্য গাড়ি এসে ধাক্কা দেওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

নূরজাহান রোড থেকে তাজমহল রোড, কলেজ গেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে কারওয়ান বাজার আসতে আরও ছয়টি গতিরোধক পার হতে হয়। গত সোমবার এই ছয় গতিরোধকের একটিতেও রং ও নির্দেশনা দেখা যায়নি। এসব গতিরোধকের প্রতিটিই অপ্রশস্ত ও উঁচু। সোনারগাঁও মোড় থেকে বিএফডিসি যাওয়ার পথে টিসিবি ভবনের সামনেও আছে এমন একটি গতিরোধক। এই গতিরোধক এত উঁচু যে অটোরিকশা ও ছোট গাড়ি দিয়ে এই গতিরোধক পার হওয়ার সময় গতি প্রায় শূন্যে নামাতে হয়। ধানমন্ডির সিটি কলেজ থেকে জিগাতলা যাওয়ার পথেও পড়ে দুটি গতিরোধক। বিভিন্ন বাহনের অন্তত ২০ জন চালক জানিয়েছেন, জিগাতলার দুটিসহ রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তার গতিরোধকই উঁচু ও অপ্রশস্ত। এগুলোতে সতর্কতামূলক কোনো নির্দেশনা নেই।

এ ছাড়া বিমানবন্দরের সামনের সড়ক ও হাতিরঝিলে দেখা গেছে ভিন্ন ধরনের গতিরোধক। মোটা রডের দণ্ডের মতো পাশাপাশি কয়েকটি বসানো হয়েছে গতি নিয়ন্ত্রণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মাল্টিপল স্পিডব্রেকার। গতি নিয়ন্ত্রণ ও চালকদের সতর্ক করার জন্য উন্নত বিশ্বে ব্যবহৃত ‘রামবেল’র বিকৃত রূপ এটি। এটিও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

বিভিন্ন বাহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্পিড বাম্পের কারণে ছোট আকারে গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও মোটরসাইকেলচালকেরা বেশি ভোগেন। আর মাল্টিপল স্পিডব্রেকার পার হওয়ার সময় প্রায় সব ধরনের বাহনের যাত্রী ও চালকেরা অতিরিক্ত ঝাঁকুনির শিকার হন।

দুই সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করে ঢাকা শহরে গতিরোধকের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দুই সিটির কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকা শহরে গতিরোধকের সংখ্যা অন্তত ২০০।

গতিরোধকগুলোতে রং করা ও নির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী (ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল) মো. সাইদুর রহমান বলেন, গতিরোধকে মার্কিং না থাকলেই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রং করা হয়। এটি চলমান প্রক্রিয়া। কয়েকটি সড়কের গতিরোধকে সম্প্রতি রং করা হয়েছে। বাকিগুলোও করা হবে। ডিএনসিসি এলাকায় যে গতিরোধকগুলো আছে, সেগুলো দুই থেকে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত উঁচু বলে তিনি জানিয়েছেন।

আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মাহবুব আলম বলেন, ‘যান্ত্রিক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট জোন গতিরোধক দেখভাল করে। এগুলো মার্কিং না করলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিন মাস পর পর গতিরোধকগুলো রং করা হয়।’ তাঁর দাবি, গতিরোধকের নির্দিষ্ট কোনো মাপ নেই।

Exit mobile version