চালের দাম বাড়লেও মূল্যস্ফীতি কমেছে!

তিন মাস ধরেই চালের বাজার চড়া। ৪৫ টাকার নিচে ১ কেজি মোটা চাল মেলেনি। নাজিরশাইল, মিনিকেটের মতো সরু চালের কেজি ৬০ টাকার ওপরে। এক বছর আগে এসব চালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম ছিল।

এদিকে গরিব মানুষকে তাঁদের আয়ের সিংহভাগ খরচ করতে হচ্ছে চাল কিনতে। তাতে সংসার চালাতে গিয়ে কমাতে হচ্ছে অন্য খাতের খরচ।

কিন্তু সরকারের গত তিন মাসের মূল্যস্ফীতির হিসাবে চালের বাজারের ‘গরম’ চিত্র যেন উধাও। অক্টোবর মাসের পরে পরপর দুই মাস সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতিও কমেছে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আগের মাসে যা ছিল ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং অক্টোবর মাসে ছিল ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ। এ হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, তিন মাস ধরে ধারাবাহিকভাবেই মূল্যস্ফীতি কমেছে।

অন্যদিকে গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। পরের মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ০৯ শতাংশে এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য দেন। চাল, পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়েছে, তা মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলছে কি না, জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতিতে এসব পণ্যের অবদান কত, তা দেখতে হবে। তবে সেই পরিমাণ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সরকারি তথ্য-উপাত্তে তা প্রকাশ পেয়েছে।

বাংলাদেশে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়। যেমন গত ডিসেম্বর মাসের সঙ্গে আগের বছরের ডিসেম্বর মাসের হিসাব করা হয়। মূল্যস্ফীতি গণনায় চালের দাম বড় ভূমিকা পালন করে। বিবিএসের হিসাবে, মূল্যস্ফীতি গণনায় গ্রাম এলাকায় খাদ্যপণ্যের অবদান ৬৩ শতাংশ। আর শহর এলাকায় ৪৯ শতাংশ। বিবিএস আরও বলছে, একজন লোকের মোট খরচের মধ্যে শুধু চালের মতো একটি পণ্য কিনতেই ২০ শতাংশ খরচ করতে হয়। সীমিত আয়ের মানুষের খরচের বড় অংশই খরচ হয় চাল কেনায়।

কিন্তু ২০১৬ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ের চেয়ে এবার একই সময়ে সাধারণ মানুষকে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে চাল কিনতে হয়েছে। বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যে চালের দাম এত বেড়ে যাওয়ার প্রভাব যেন মূল্যস্ফীতিতে নেই।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং বা সানেমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে চালের দাম প্রায় ৩০ শতাংশের মতো বেড়েছে। এতে ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে গেছে।

বিবিএস আরও বলছে, গত ডিসেম্বরে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। তখন শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮২, আর গ্রামে ছিল ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এদিকে বিদায়ী অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির মাসওয়ারি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জুলাই ও অক্টোবর মাসে ৬ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। বাকি ১০ মাস মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের মধ্যেই ছিল।

Leave a Reply