ছাত্র লীগের কুলুসিত ছাত্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের নৈতিকতার অবক্ষয়

মোঃ কাশেদুল হক কাজল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইডেন মহিলা কলেজ। বাংলাদেশের এক ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। এক সময়ের ইডেন কলেজে পড়ুয়ারা এখন পরিণত রাজনীতিবিদ। এখনকার পরিণত রাজনীতিবিদদের মধ্যে ইডেন কলেজের ছাত্রী হিসাবে যাদের বুকটা গর্ভে ভরে উঠে। তাদের সেই ইডেন কলেজ আজ রণক্ষেত্র। ঐতিহ্যের গায়ে কালিমা লেপিত হয়েছে শিক্ষার্থীদের সতিচ্ছেদের তাজা রক্তে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের বুক আজ ক্ষত বিক্ষত।

ইডেন কলেজে সংঘটিত বিগত কিছু দিনের ঘটনায় বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে যথেষ্ট বিব্রতের মাঝে ফেলেছে। সাধারণ মানুষের মনে ছাত্র লীগের ছাত্র রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা জন্ম দিয়েছে। কোথায় গিয়েছে আমাদের রাজনীতি? রাজনৈতিক নেতাদের কি চারিত্রিক অবক্ষয় হয়েছে নাকি অরাজনৈতিক ও অযোগ্য লোকেরা রাজনীতিকে দখল করে নিয়েছে? এ কোটি টাকার একটি প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের চিন্তা চেতনায় ও মগজে ঘুরপাক খাচ্ছে।

সাধারণ মানুষ এতদিন জানত, রাজনীতি তারাই করে, যারা অন্য সাধারণ মানুষের থেকে চিন্তা, চেতনা, দূরদর্শিতা, নৈতিকতা ও আদর্শের দিক থেকে অনেক উর্ধ্বে এবং একেবারেই ব্যতিক্রম ও আলাদা। সমস্ত লোভ লালসার উর্ধ্বে থেকে জাতির বিবেক হিসেবে নিজের আদর্শিক শিক্ষা, জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক ও যোগ্যতার আলোকে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে মানুষের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে ইতিহাস রচনা করে। মানুষ মরে যায়, ইতিহাসের পাতায় তার নাম থেকে যায়। খ্যাতনামা রাজনীতিবিদদের জীবনীতে আমরা তাইই দেখি।

কিন্ত বর্তমানে আমরা এসব কি দেখছি, কি শুনছি? শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি, ছাত্রলীগের মূল নীতি। বর্তমান ছাত্রলীগ কি এখন সেই আদর্শের উপর দাড়িয়ে রাজনীতি করছে? নাকি বর্বর অসভ্যতার আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছে? বঙ্গবন্ধুর নামে রাজনীতি করছে আবার বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের দুর্নাম করছে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে কিছু শিখে নাই। মনে হয়, সবাই নিজের স্বার্থের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামটি ব্যবহার করছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা কিছুই রপ্ত করে নাই। এরা আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাস করে না। শুধু স্বার্থের জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে। এর জন্য আসলে কারা দায়ী? এ প্রশ্নের জবাবে, যে যত যুক্তি দাঁড় করিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করুকনা কেন? ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দদেরকে এর দায় এড়াবার সুযোগ নাই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতি এখন আর আগের মতো আদর্শিক লোকের হাতে নাই। রাজনীতি চলে গেছে, আদর্শহীন অরাজনৈতিক ও অযোগ্য লোকের হাতে। বর্তমানে আদর্শের কোন মূল্য নাই। রাজনৈতিক নেতাদেরও মূল্যায়ন চলে গেছে, টাকা, পেশি শক্তি, অবৈধ কারবারিদের উপর। তৃনমূল রাজনৈতিক মিছিল মিটিং শো-ডাউন গুলো দেখলে পরিলক্ষিত হয় যে, যত মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবী, টেন্ডারবাজ ও অবৈধ জমি দখলকারীদের নিয়ে রাজনৈতিক আড্ডাখানা ও মিছিল মিটিং। সকল মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবী, টেন্ডারবাজ ও অবৈধ জমি দখলকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অফিস ও পার্টি অফিস। নেতাদের চারিপাশে তেলবাজি করে, এরা দুনিয়ার অপকর্ম করে। তাতে দলের ভাবমুর্তি নষ্ট হলেও এদের কিছু যায় আসে না। কারন এদেরতো দলের প্রতি কোন দরদ নাই, দলের আদর্শ লালন করে না। শুধু নেতাদের তেল মেরে অর্থ বিত্ত কামাই করাই এদের রাজনীতি। আবার অনেক নেতারাও তেলবাজি খুব পছন্দ করে। নেতাদের তেলবাজি পছন্দ করার সুযোগে রাজনীতিতে আদর্শহীন, অযোগ্য লোকেরা ঢুকে পড়েছে। আবার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধিকে গায়েল করার জন্য আদর্শহীন, সমাজের কুলুসিত ও অপরাধী লোকদের নিয়ে নিজের দল ভারী করেছে। এরাই সকল অপকর্ম করে আওয়ামী লীগের বারোটা বাজিয়েছে।

রাজনৈতিক নেতারা এখন মাদকের বিরুদ্ধে মানববন্দন করে সকল মাদক কারবারীদের হাতে মাদকবিরোধী ব্যানার দিয়ে। মাদক কারবারীদের হাতে থাকে মাদক নির্মূলের ব্যানার। আর এতে জনগণ মুচকী মুচকী হাসে। মাদক কারবারী ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের ডাকে ৩০০/৪০০ শত মোটর সাইকেল নিয়ে মিছিল, শো-ডাউন করা খুব সহজ। আবার তাদের কোন টাকা কিংবা খরচ দিতে হয় না। বিনিময়ে মাদকসহ অবৈধ সকল অপকর্ম নেতার ছায়াতলে থেকে এরা করতে পারে। এ চিত্র এখন সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের রাজনৈতিক কর্মীদের বেলায় দেখা যায়, যদিও এখনো অনেক ভাল ও সৎ রাজনীতিদি আছে। আদর্শ লালনকারী কর্মীরা তেলবাজিতে পিছিয়ে থাকায়, ধীরে ধীরে এরা রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছে। রাজনীতি এখন বেদখল হয়ে গেছে আদর্শহীন লোকের কাছে। এই আদর্শহীন নেতারা এখন পরিচালনা করেন ছাত্র রাজনীতি। আদর্শহীন নেতাদের কুলুসিত চিন্তাধারায় বর্তমান ছাত্রলীগ ও এখন দিন দিন আদর্শের বাহিরে চলে গেছে মনে হয়। তা না হলে ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীদের সম্পর্কে যে অভিযোগ গুলো সাধারণ ছাত্রীরা এনেছেন, এগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মনে এখন প্রশ্ন জাগে, আসলে ইডেন কলেজ কি একটি বিদ্যাপীঠ, নাকি রাজনৈতিক নেতাদের মনোবিলাসের পণ্য সংগ্রহশালা। এদের গ্রাহকই বা কারা? এর জবাব খুজতে গিয়ে একটি প্রশ্ন জাগে মনে, রাজনৈতিক নেতাদের কি চারিত্রিক অবক্ষয় হয়েছে নাকি অরাজনৈতিক ও অযোগ্য লোকেরা রাজনীতিকে বেদখল করে নিয়েছে?

ইডেন কলেজের ছাত্রীদের পরস্পর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংগঠনিক যে ব্যবস্থাই নেওয়া হোক না কেন তা নিয়ে মানুষের কোন প্রশ্ন নাই। কতজনকে বহিস্কার করা হলো, কাকে কাকে করা হলো, তা নিয়েও কোন প্রশ্ন নাই। ছাত্র রাজনীতির নামে ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আবাসিক হলগুলোর যে ভয়ঙ্কর চিত্র বেড়িয়ে এসেছে, এটা নিয়েই সাধারণ মানুষ খুব চিন্তিত। আমরা আমাদের সন্তানদের কোথায় ভর্তি করার জন্য এ লড়াই করছি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটা জাতির জন্যও এক অশনি সংকেত যে, রাজনীতিতে “রাজনীতির অপসংস্কৃতি” ঢুকে পড়েছে। রাজনীতিতে সৎ, চরিত্রবান, নির্লোভ ও আদর্শিক লোকের খুব অভাব হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারনে ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষাঙন কুলুসিত হয়েছে। এদের কর্মকান্ডে সরকারের সকল কৃতিত্বগুলো ম্লাণ করে দিচ্ছে। এখনই যদি এর লাগাম ধরে টানা না হয়, অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য এটা বিষ ফোঁড়া হয়ে বিস্ফোরিত হবে।

Leave a Reply