Site icon Doinik Bangla News

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়, নাকি ষড়যন্ত্র?

মোঃ কাশেদুল হক কাজলঃ  জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডে হঠাৎ বিপর্যয়। এ বিপর্যয় কি কোন দূর্ঘটনা, নাকি সরকারের ব্যর্থতা। নাকি জনগণের কাছে সরকারের ব্যর্থতা প্রমানের জন্য কোন চক্রের ষড়যন্ত্রের কারনে এ বিপর্যয় হয়েছে তা কিন্তু পরিষ্কার নয়।

যদিও পাওয়ার বিদ্যুৎ সঞ্চালনকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘোড়াশাল থেকে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে বলে জানা যায়, কিন্তু কি কারনে হয়েছে তা এখনো জানা যায় নি। এ ব্যাপারে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কিংবা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের সদস্যদের নিয়ে বলে জানা যায়। তদন্তে সত্য বেড়িয়ে আসুক দেশের জনগণ সেটাই আশা করে।

প্রশ্ন হলো, বিদুৎ বিভাগ নিয়ন্ত্রিত জাতীয় গ্রীডে যারা সঞ্চালনার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন, সেখানে অনেক তড়িৎকর্মা ব্যক্তি রয়েছেন, আছেন বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলী। তারা জানবেন না যে কি কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হলো, এটা হতে পারে না। বার বার এমন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনাকে সরকারের বিভিন্ন মহলই ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন এবং সামনে আরও বড় ধরনের ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু বদ্যিুৎ বিপর্যয় নয়, নানা ক্ষত্রেইে এখন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখন দৃষ্যমান হচ্ছে এবং এই ষড়যন্ত্রগুলোর কারণে সরকাররে যে র্অজন তা ব্যাহত হচ্ছে।

সাড়া দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর বিরোধী দল থেকে বিএনপি মহাসচিব দাবী করেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে সরকার লুটপাট করেছে, সরকার ব্যর্থ। তাই এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।

ফখরুল আরও বলেন, ‘এ থেকে যেটা বোঝা যায়, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে বহু প্রজেক্ট করেছে, টাকা-পয়সাও বহু বানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের একটা বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছে। সব কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, ফিলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিকে এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে ব্ল্যাকআউট আরও হবে বলে হুমকি প্রদান করে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির মাস্টার প্লান আছে বলে জানায়।

জাতীয় পার্টির জি.এম কাদের বলেছেন, গ্রিড বিপর্যয় অন্ধকার রাষ্ট্র এতেই প্রমাণ করে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগ দুর্নীতি-অনিয়মে চ্যাম্পিয়ন।

বিরোধী দলের নেতাদের পক্ষ থেকে কেউ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারন উদঘাটনের জন্য দাবী করেনি। এতেই সন্দেহ হয় যে, তারা এমন একটি পরিস্থিতির জন্য আগে থেকে প্রস্তুত ছিলেন কিংবা আশা করেছিলেন, জনগণের উদ্দেশ্যে তাদের সবার বক্তব্যের মেসেজ কিন্তু একটাই, সরকার ব্যর্থ, তাই এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। সরকার পরিচালনা একমাত্র তারাই যোগ্য। তাদের এহেন বক্তব্যে, জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড বিপর্যয় কোন না কোন ষড়যন্ত্রের কারনে সংঘটিত হয়েছে, এ ধারনাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

সরকারের তরফ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সরকারের বাহিরের লোকজনের সাথে সরকারের ভিতরের লোকজন ও জড়িত আছেন বলে কেউ কেউ মনে করেন। আওয়ামীলীগ সরকারের ১৪ বছরের শাসন আমলে সরকার বিরোধী অনেক লোক হাইব্রিড, কাওয়ালীগ, জামাত, বিএনপির লোক সরকারের অনেক নেতাদের ম্যানেজ করে, সরকারী বেসরকারী  অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল আছে। নির্বাচনের আগে তারা রূপ বদলানো শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও বিভিন্ন অজুহাতে কিংবা কিছু নেতার আপত্তি ও যুক্তির কারনে হাইব্রিড আওয়ামীলীগারদের বিরুদ্ধে কখনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় নাই। কিছুদিন হৈচৈ করে আবার অ্জ্ঞাত কারনে নিশ্চুপ  হয়ে যায়। আবার অনেক এমপি আছেন, যারা আগামী নির্বাচনে নমিনেশন না পাওয়ার আভাস পেয়েছেন, তারাও এ ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকতে পারেন বলে, কেউ কেউ মনে করেন। আওয়ামীলীগের অনেক এমপি আছেন, নৌকা প্রতীক না পেলে, সতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবেন কিংবা অতীতেও করেছেন। প্রকৃত পক্ষে এরা আওয়ামীলীগার না। এরা সুবিধাবাদী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডেরও কেউ কেউ নমিনেশন বানিজ্যের মাধ্যমে অনেক বিএনপি-জামাতের লোককে আওয়ামীলীগার বানিয়েছে। আজ এর খেসারত শেখ হাসিনা সরকারকে দিতে হচ্ছে।

ষড়যন্ত্র যারাই করুক, এদেরকে চিহ্নিত করে খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে, সরকারকে আরো খেসারত দিতে হবে বলে ধারনা করা যায়। ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারের ভিতরের লোকজনকে দিয়েই দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরীর চেষ্টা করছে। কারণ, শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই টাকার কাছে বিক্রি হয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন।

 

Exit mobile version