Site icon Doinik Bangla News

জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা বাদ, প্রতিফলন ঘটতে পারে সংসদ নির্বাচনেও

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন না পেয়ে এবারও যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের প্রতি সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় আওয়ামী লীগ প্রধান স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘দল সমর্থিত একক প্রার্থীর পক্ষে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিদ্রোহীদের আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’
জেলা পরিষদের গতবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়েও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ১১ জন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের বেশির ভাগ এবারও দলীয় সমর্থন চেয়েছিলেন। তবে তাদের কেউই দলের সমর্থন পাননি। এছাড়া গতবারের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরাজিত হওয়া শতাধিক নেতার অনেকে এবার সমর্থন চেয়েছিলেন, তাদের কাউকেও আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয়নি। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আওয়ামী লীগ আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বিদ্রোহী কাউকে দলীয় মনোনয়ন কিংবা সমর্থন দেওয়া হবে না। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর প্রতিফলন দেখা যেতে পারে। সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিদ্রোহী ও বিতর্কিতরা বাদ পড়তে পারেন।
আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী হিসেবে যাদের সমর্থন দিয়েছে, সেই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩০টিতে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এবং দলের জন্য ত্যাগ রয়েছে ও স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়—এমন নেতাদেরই সমর্থন দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, বিরোধীদলে থাকাকালে যারা দলের জন্য ভূমিকা রেখেছেন তারাই পেয়েছেন দলের সমর্থন। যেসব জেলায় চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগ ওঠেনি সেসব জায়গায় প্রার্থী পরিবর্তন আনা হয়নি। এর বাইয়ে বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণেও কয়েক জনকে পরিবর্তন করা হয়েছে।
এদিকে, ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫০টিরও বেশি জেলায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল অংশ নিচ্ছে না। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, বেশির ভাগ জেলা পরিষদেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। বিএনপি এ সরকারের আমলে আর কোনো স্তরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও কয়েকটি জেলা পরিষদে দলটির নেতারা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয় না। জানা গেছে, পঞ্চগড় পৌর বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও দলের তেঁতুলিয়া উপজেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য-সচিব রেজাউল করিম শাহীন আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও জেলা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদও চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে মাঠে রয়েছেন।
জাতীয় পার্টির (জাপা) তিন নেতাও তিনটি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে লড়বেন। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জে জয়নাল আবেদিন, নেত্রকোনায় আসমা আশরাফ এবং গাইবান্ধায় আতাউর রহমান। তাদের মধ্যে আতাউর রহমান গতবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে সেখানকার প্রশাসক। এছাড়া চট্টগ্রামে মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব হোসেন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে পারেন।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রোউল ইসলাম ভূইয়া গতকাল রবিবার ইত্তেফাককে বলেন, ‘তিনটি জেলা ছাড়াও অন্য কোনো জেলায় আমাদের দলের কেউ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চাইলে দল থেকে বাধা দেওয়া হবে না। যেহেতু এটা দলীয় নির্বাচন নয় এবং দলীয় প্রতীকেরও কোনো বিষয় নেই—তাই জাপা কেন্দ্রীয়ভাবে এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ রেজাইল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান পদে কয়েকজন প্রার্থী হলেও বিভিন্ন জেলা পরিষদে সাধারণ সদস্য পদে জাপার অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা জাসদের (ইনু-শিরীন) সভাপতি গোলাম মহসিন। বাংলাদেশ জাসদের (আম্বিয়া-প্রধান) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আল আমিন পঞ্চগড়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ এবং শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত ২৩ আগস্ট তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে। এতে সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত ৬৩ হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি ভোট দেবেন। ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। আগামী ১৭ অক্টোবর ৬১ জেলা পরিষদেই সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

Exit mobile version