জ্বালানীর দাম ৪৭ শতাংশ বেড়ে কমলো ৪ শতাংশ

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ দেশে জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ পরিমান বৃদ্ধির ২৩ দিন পর সমালোচনার মুখে লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা কমিয়েছে সরকার। চার ধরণের জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটার পাঁচ টাকা করে কমানোর ফলে গতকাল সোমবার রাত ১২টা থেকে প্রতি লিটার কেরোসিনের নতুন দাম হবে ১১৪ টাকার পরিবর্তে ১০৯ টাকা, ডিজেল ১১৪ টাকার পরিবর্ততে ১০৯ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকার পরিবর্তে ১৩০ টাকা এবং পেট্রোল ১৩০ টাকার পরিবর্তে ১২৫ টাকা। গত ৫ আগষ্ট গড়ে ৪৭ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। ২৩ দিন পরে ৫ টাকা কমানোয় গড়ে দাম কমেছে সোয়া চার শতাংশ।
গত ৫ আগষ্ট রাত ১২টায় সর্ব্বোচ্চ পরিমাণ জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম ৪২ শতাংশ থেকে প্রায় ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়। এত বেশি পরিমাণ দাম এক সঙ্গে বৃদ্ধির পর থেকে থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে তেলের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা হয়েছে। ফলে তেলের দাম সমন্বয়ের মাধ্যমে দাম কিছুটা কমানোর চেষ্টা ছিলো সরকারের অভ্যন্তরে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গত রবিবার জ্বালানি তেল আমদানিতে ডিজেলের ওপর থেকে কিছুটা শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রবিবার ডিজেলের আগাম কর অব্যাহতি ও আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সেই প্রেক্ষিতে জ্বালানি বিভাগ গতকাল সোমবার থেকে লিটারপ্রতি ৫ টাকা দাম কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারন করেছে।
তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করে ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ২৩ দিন পর লিটারপ্রতি মাত্র ৫ টাকা জ¦ালানি তেলের দাম কমানোর কারনে সাধারন ভোক্তারা কোন সুবিধা পাবে কিনা জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি বা কমানো, সরকারের পুরো প্রক্রিয়াটি অবৈধ। এই অবৈধ প্রক্রিয়ার নিয়ে কথা বলে কোন লাভ নেই। তিনি আরও বলেন, এর আগেও একবার জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি তিন টাকা কমানো হয়েছিলো, যার কোন ফল ভোক্তারা পায়নি। তখন গণপরিবহনের ভাড়া কমেনি। এবারও ভোক্তারা কোন সুবিধা পাবে বলে মনে হয় না। বাস ভাড়া, নিত্যপণ্যের বাজার যা বাড়ার বেড়ে গেছে। এখন আর কমবে বলে মনে হয় না। কেবল সাধারন মানুষের পকেট কাটা।
এদিকে তেলের দাম কমানোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি বিভাগ থেকে পরিবহন ভাড়া কমিয়ে দেওয়ার জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বা পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কোন বৈঠক করা হবে কিনা জানতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পরিবহন ভাড়া জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ-এর। তারা বৈঠক করে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পরিবহন ভাড়া সমন্বয় করবে।
এদিকে গতকাল দুপুরে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ডিজেলের ওপর থেকে কিছুটা শুল্ক কমানো হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এখন হিসাব করছে এনবিআরের শুল্ক কমানোর কারনে তেলের দামে কোন সমন্বয় আনা যায় কিনা। বিশেষ করে কিছুটা কমানো যায় কিনা। তিনি বলেন, বিপিসি হিসাব করছে, তাদের হিসাব পেলে আগামি দুই-একদিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হতে পারে। অবশ্য প্রতিমন্ত্রীর বিফ্রিংয়ের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জ¦ালানি তেলের দাম কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের জ্বালানি বিভাগ।
প্রতিমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, সরকার যেহেতু শুল্ক ছাড় দিয়েছে, সেটা হয়তো কিছুটা তেলের দাম সমন্বয়ে সাহায্য করবে। তবে তেলের মার্কেট আবার বেড়েছে। আমরা ভেবেছিলাম আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হবে। কিন্তু এখনও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বাজারে তেলের বাজার ১৫০ ডলারের (প্রতি ব্যারেল) ওপরে চলে গেছে। আগে ১৩০ ডলার ছিল। এখানে ভর্তুকির বড় একটা অংশ যোগ হবে।
প্রসঙ্গত, সরকার গত ৫ অগাস্ট থেকে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করেছে। পেট্রোলের দাম ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেন ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করেছে।
অবশ্য এর আগে তেলের দাম বৃদ্ধির কারন হিসেবে সরকার ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে আর্ন্তজাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিকে দায়ি করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা ছাড়া বিপিসির কাছে কোন উপায় ছিলো না।

 

Leave a Reply