তত্ত্বাবধায়ক সরকারে না: নির্বাচন নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব চায় যুক্তরাষ্ট্র

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ধরনা দিচ্ছে বিএনপি। এ সমস্ত বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দাবি করেন। বিএনপির নেতারা এটাও বলছেন যে, দলীয় সরকারের অধীনে কখনো নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারবে না এবং অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপির নেতৃবৃন্দ এটিও বলেছেন যে, বাংলাদেশ ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনগুলো গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কারণ, তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে। এ জন্যই অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করাটা জরুরি বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, বিএনপি’র নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি তারা সমর্থন করেনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিএনপির অন্তত দুইজন নেতার সাথে আজ এক বৈঠকের পর এই বার্তাটি দেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি বিভক্ত রাজনৈতিক ইস্যু। যেখানে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে, অন্যদিকে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। বিএনপি যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে নির্বাচন করবে না বলছে, তেমনি আওয়ামী লীগও একটি জনপ্রিয় দল হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি কোনোভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিচ্ছে। ফলে দুইটি রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে একমত হতে পারবে না এবং এটি অসম্ভব ব্যাপারে। এ কারণেই বিএনপিকে একটি মাঝামাঝি অবস্থায় আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশের বর্তমান সাংবিধানিক পরিকাঠামোতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয়, স্বাধীন এবং তার ওপর অর্পিত ক্ষমতাগুলো প্রয়োগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এটা মনে করে যে, যদি কোথাও কোথাও দেখা যায় যে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে বা কোনো আইন বা নীতি পরিবর্তন করতে হবে সেটি নিয়ে তারা আলাপ-আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়। বিএনপির অন্তত দুইজন নেতার সঙ্গে এই বৈঠকে বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে প্রতিনিধিরা বিএনপিকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার, ইভিএম, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের ভূমিকা কতটুকু সংকুচিত করা যায় এই সমস্ত বিষয়ে সুস্পষ্ট পরামর্শ দিতে বলেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা মনে করে যে নির্বাচনকালীন সময়ে যদি সরকার শুধুমাত্র রুটিন দায়িত্ব পালন করে, নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করে এবং ভোটার তালিকা যদি সুষ্ঠু হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি ভালো হয় সেক্ষেত্রে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এমনটি তারা মনে করেনা। বরং যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়েও দুটি দলের মধ্যে পরস্পরবিরোধী অবস্থান ছিল। এই পরিস্থিতিতে তারা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এটি বিএনপির জন্য একটি বড় হোঁচট। কারণ, বিএনপি মনে করতো যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করছে না তখন এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ এখন প্রায় অসম্ভব বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার

Leave a Reply