নির্বাচন বর্জন: তারেককে নিয়েই বিএনপিতে আতঙ্ক

গতকাল নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এ রোডম্যাপ ঘোষণার পরপরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছে, তারা এই রোডম্যাপ মানেনা। বিএনপি মহাসচিব এটিও বলেছেন যে, বর্তমান সরকারই অবৈধ। অবৈধ সরকারের অবৈধ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। বিএনপির অন্যান্য নেতারাও প্রায় একই সুরে কথা বলছেন। কিন্তু মুখে বিএনপি যাই বলুক না কেন নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণার পর বিএনপির মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক চলছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতা বলছেন যে, আমরা অতীতেও বলেছিলাম নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে বিএনপির যাওয়া উচিৎ নয়। যে কারণে আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাটা ভুল ছিল না সঠিক ছিল সেটি পরের ব্যাপার, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে এসে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছাড়াই এবং কোনো রকম শর্ত পূরণ ছাড়াই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন যদি হয় ভুল তাহলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল মহাভুল। বিএনপি নেতারা সে কারণেই এখন মনে করছেন যে, ২০১৮ সালে নির্বাচনে যদি বিএনপি না যেত তাহলে হয়তো বিএনপি এখন বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারতো। কিন্তু যে কারণেই হোক বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি কিভাবে ফিরে আসবে সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতারা বলছেন যে, সমস্যা অন্য জায়গায়। বিএনপির একক নিয়ন্ত্রক হলেন এখন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তার হাতেই বিএনপির চাবি এবং তার সিদ্ধান্তই বিএনপিতে শেষ কথা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সিদ্ধান্ত ছিল তারেক জিয়ার। আর ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, তারেক জিয়া ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন।  তারেক জিয়া ওই নির্বাচনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন বলে বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যেই বলাবলি করেন। বিশেষ করে কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় তিনজন চারজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে তাদের সবার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
বিএনপি’র বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে যে, ৭০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত মনোনয়ন বাণিজ্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উপার্জন করেছেন। আর এ কারণেই বিএনপি মধ্যে শঙ্কা। আবার নির্বাচনের আগে একটি বড় ধরনের মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ সামনে আসবে। এই সুযোগ কি তারেক হাতছাড়া করতে পারবেন? তারেক জানে যে, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করা দিয়ে বিএনপির কিছু যায় আসে না। কারণ, বিএনপি এই নির্বাচনে জিতবে না। আবার এই নির্বাচন বর্জন করে সরকারের পতন হবে এমনটিও তারেক জিয়া মনে করো না। এরকম বাস্তবতায় তারেক জিয়া হয়তো শেষ পর্যন্ত অর্থের লোভে নির্বাচনের দিকেই ধাবিত হবেন। বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন যে, তারেক জিয়াকে টাকা দিয়ে সবকিছুই করানো যায়। এমনও হতে পারে যে, সরকারের সঙ্গেও তারেক জিয়া হয়তো একটি  আপসরফায় আসবেন এবং সেই আপসরফার মাধ্যমে তিনি সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে পারেন। তাছাড়া আগামী নির্বাচনের আগে সারাদেশে ৩০০ আসনে মনোনয়ন বাণিজ্য করার সুযোগ আছে। বিএনপির অনেক নেতার প্রশ্ন, তারেক জিয়া কি এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন?
বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে কি যাবে না সে বিভিন্ন বিষয়। কিন্তু আন্দোলনের মাঝপথে যদি বিএনপি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেটা বিএনপির জন্য হবে বুমেরাং এবং আত্মঘাতী। আর সেই সিদ্ধান্ত যে বিএনপি নেবে না এমনটি উড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপার নেই। কারণ, তারেক জিয়া এই নির্বাচন থেকে যে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন সেই লোভ তিনি সম্বরণ করবেন কিভাবে? আর এ কারণেই বিএনপি এখন তারেক জিয়া আতঙ্ক চলছে। আন্দোলন যতই তীব্র হোক না কেন, নির্বাচনের টাকা যে ভাগ-বাটোয়ারার হিস্যা তারেক জিয়া পেতে চান এটি নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। আর হিস্যার লোভেই বিএনপিকে ভুল পথে পরিচালিত তিনি যে অতীতে করেছেন, তার প্রমাণ বিএনপি নেতাদের কাছে তো আছেই।
সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার

Leave a Reply