Site icon Doinik Bangla News

বিক্ষোভ- ধর্মঘটে অচল ইউরোপ

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে । জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছিল। তারই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। আট মাসব্যাপী এ যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। শুধু তাই নয়, এ ধাক্কায় ভারসাম্য হারিয়েছে ইউরোপের ‘বাঘা-বাঘা’ উন্নত দেশও। অনাহার আর অর্ধাহারে থাকার অনুশীলনে নেমেছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। খাদ্যমূল্য চোকাতে বেড়েছে সাধারণ মানুষের হা-পিত্যেশ। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গুরুতর প্রভাব পড়েছে ইউরোপে। দীর্ঘ প্রায় আট মাসের এ যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে বেড়েছে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দাম। পলিটিকো।

খরা গ্রাস করেছে হর্ন অব আফ্রিকাকে। আগামী ছয় মাসে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়বে কেনিয়া, ইথিওপিয়া এবং সোমালিয়ার প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। এ দুর্যোগে ৭০ লাখের বেশি গবাদি পশু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া সমগ্র পূর্ব আফ্রিকা জুড়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অনুসারে, ৪৬টি দেশের রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটের মধ্যে দুর্ভিক্ষ বা দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হলো ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান, সোমালিয়া এবং ইয়েমেন। এই দেশগুলোর ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ অনাহারে মৃত্যুর মুখোমুখি। এদের মধ্যে ৪ লাখই শুধু ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চলে-যেখানে গৃহযুদ্ধ চলমান।

খাদ্য সংকট কাটাতে কৃষ্ণসাগর পুনরায় চালু করতে জাতিসংঘের চুক্তি হলেও তা আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে কোটি কোটি ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূরীকরণে কাজ করে যাওয়া শাম্বা সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ক্যারিন স্মলার বলেন, ‘আমি এই সেক্টরে কাজ করছি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। কিন্তু এমন বাজে খাদ্যসংকট আমি আমার জীবনে দেখিনি।’ আরও বড় আকারের সংকটের জন্য তৈরি হচ্ছে মানবিক সংস্থাগুলো। ইউরোপের রুটির ঝুড়ি (ইউক্রেন) বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সংকট ঘনীভূত হয়েছে। কারণ এ মহাদেশের অধিকাংশ দেশই খাদ্যের জন্য নির্ভর করত ইউক্রেন ও রাশিয়ার ওপর।

গোটা বিশ্বে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি চেপে ধরেছে ক্ষুধার্ত মানুষের টুটি। ওষ্ঠাগতপ্রাণ দেহে জীবনের সঞ্চার করতে ধর্মঘট আর বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শ্রমজীবীরা। জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলানে ব্যর্থ ও বেতন নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হওয়ায় ধর্মঘট ও বিক্ষোভে উত্তাল বিভিন্ন দেশ। মঙ্গলবার দেশে দেশে ঘটে যাওয়া কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভের চিত্র তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার প্যারিসের রাস্তায় নেমেছিল হাজার হাজার মানুষ। মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় ফ্রান্সে আঞ্চলিক ট্রেন চলাচল প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। ধর্মঘট প্রাথমিকভাবে সরকারি খাতকে প্রভাবিত করেছে। তবে শিক্ষকরা ধর্মঘটে অংশ নেওয়ায় স্কুলগুলোতে কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

বেতন নিয়ে বিরোধের কারণে চলতি মাসের শেষ দিকে পাঁচ দিনে ধর্মঘটে যাচ্ছেন ব্রিটেনে পণ্য সরবরাহকারী চালকরা। মঙ্গলবার ইউনাইটেড ইউনিয়ন জানিয়েছে, এই ধর্মঘটে বিয়ার সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। ব্রিটেনের অন্যতম বৃহৎ কনটেইনার বন্দর লিভারপুলে শত শত শ্রমিক ২৪ অক্টোবর থেকে বেতন ও চাকরির জন্য আরও দুই সপ্তাহের ধর্মঘট গ্রহণ করবে। রাজকীয় ডাক কর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী কমিউনিকেশন অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন রয়্যাল মেইল সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের শুরুতে ধর্মঘট করেছে। বেতন ও অপারেশনাল পরিবর্তন নিয়ে কয়েক মাস ব্যর্থ আলোচনার পরে তারা আরও ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে। ব্রিটেনের বৃহত্তম নার্সিং ইউনিয়নের তিন লাখেরও বেশি সদস্য বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটের পক্ষে ভোট দেওয়া শুরু করেছে। বেতন ও চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে বিরোধের জেরে রেলকর্মীরাও ধর্মঘট করেছেন।

লুফথানসা ইউরো উইংয়ের পাইলটরা সোমবার থেকে তিন দিনের ধর্মঘট শুরু করেছে। তাদের ইউনিয়ন জানিয়েছে, ধর্মঘটের কারণে হাজার হাজার যাত্রীর ওপর প্রভাব পড়ছে। উচ্চ মজুরির জন্য ধর্মঘটে যোগদানের জন্য বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের সমর্থনে হাজার হাজার হাঙ্গেরিয়ান ছাত্র এবং অভিভাবক ১৪ অক্টোবর সমাবেশ করেছে। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রাগে হাজার হাজার নাগরিক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং দেশটির ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। কমিউনিস্টসহ অতিডানপন্থিরা এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল। বিদ্যুতের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ২১ সেপ্টেম্বর ব্রাসেলসের রাস্তায় নেমেছিল হাজার হাজার মানুষ। জুন মাসে একই ধরনের একটি বিক্ষোভে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক যোগ দিয়েছিল।

আংশিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অনেক অংশ চরম আবহাওয়া অনুভব করছে। দক্ষিণ এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে চরম তাপ ইউরোপ, পূর্ব আফ্রিকা এবং চীনের বড় অংশ খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Exit mobile version