Site icon Doinik Bangla News

মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. কামরুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে আসামি করে চার্জশিট দিয়েছেন পিবিআই। সেটি আমরা গ্রহণ করে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিবো। আগামীকাল আদালত চার্জশিট দেখবে। আগামী ১০ অক্টোবর মামলাটির শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে। চার্জ সিটে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠা রয়েছে।

২০১৬ সালের ৫ জুন জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় ওই বছরের ৬ জুন জঙ্গিরা জড়িত দাবি করে স্বামী বাবুল আকতার পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন।

পাঁচলাইশ থানা পুলিশের পর নগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের ভার পায় পিবিআই। ২০১৬ সালের ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে ঢাকার ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে এনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আবু নসুর গুন্নু, শাহ জামান ওরফে রবিন, সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু, শাহজাহান, মো. আনোয়ার ও মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিমকে আটক করেছিল পুলিশ। হত্যায় অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আটক হন এহেতেশামুল হক ভোলা ও তার সহযোগী মো. মনির। তাদের কাছ থেকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়, যেটি মিতু হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছিল।

গ্রেফতার আনোয়ার ও মোতালেব মিতু হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে মিতু হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম আসে বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে পরিচিত মো. মূছার। ২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য ২০২১ সালের ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়।

হত্যাকাণ্ডে বাবুল জড়িত বলে সন্দেহ তৈরি হলে একইদিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন নগরের পাঁচলাইশ থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। এ মামলায় ২০২১ সালের ১২ মে বাবুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর আদালতে নারাজি আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে নিজের করা মামলায়ও ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি বাবুলকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন আদালত। গত ৬ মার্চ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হয়।

এদিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এক নারী কর্মীর কাছ থেকে একটি বই উপহার পেয়েছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আলামত হিসেবে সেই বই জব্দ করেছে পুলিশ। বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গত ২২ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল হালিমের খাস কামরায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষা করা জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে আদালত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) এ সংক্রান্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

গত ১৯ এপ্রিল আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, উপহার পাওয়া বইয়ের হাতের লেখার সঙ্গে বাবুল আক্তারের হাতের লেখার মিল পাওয়া যায়। উপহার হিসেবে পাওয়া বইয়ে বাবুলের হাতের লেখা ছিল ইংরেজিতে। সেই লেখার সঙ্গে বাবুলের হাতের লেখার তুলনামূলক পরীক্ষার সাধারণ ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের মিল পাওয়া গেছে। সাধারণ বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে ইংরেজি অক্ষর ‘আর’, ‘ই’, ‘পি’, ‘এন’, ‘ও’ ইত্যাদি বর্ণ লেখার বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতির মিল রয়েছে। ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে মুভমেন্ট, স্পিড, স্কিল, লাইন, কোয়ালিটির মিল রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত ৪ জুলাই মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তার ও মিতু দম্পতির ছেলে আক্তার মাহামুদ মাহির (১২) ও মেয়ে তাবাসসুমকে (৯) মাগুরা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কক্ষে শিশুদের দাদা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়ার উপস্থিতিতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
Exit mobile version