Site icon Doinik Bangla News

“যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে হিউম্যান রাইট ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভূমিকা সঠিক ছিল নাঃ সুলতানা কামাল

মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী সুলতানা কামাল গুম সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে ইন্ডিয়া টুডে’র সাথে কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে হিউম্যান রাইট ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভূমিকা সঠিক ছিল না বলে আমি মনে করি।”

ইন্ডিয়া টুডে মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী সুলতানা কামালের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিল বাংলাদেশে সরকার কর্তৃক গুমের বিয়ে জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে। সুলতানা কামালের সাক্ষাৎকারের একটি মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় আমরা সাক্ষাত্কারের পুরো স্ক্রিপ্টটি প্রকাশ করছি।

ইন্ডিয়া টুডে: জাতিসংঘের মতো সংস্থার কি বাংলাদেশে গুমের মত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথার বলার জন্য কেবল কিছু বেসরকারী এনজিও’র দেয়া তথ্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করা উচিত হচ্ছে? বিশেষ করে যেখানে অধিকারের মত কিছু এনজিও ২০১৩ সালে হেফাজত ইস্যু ও শালপা চত্বরে হামলার বিষয়ে ভুল মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছে?

সুলতানা কামাল: জাতিসংঘ তো বটেই, কোনো দায়িত্বশীল সংস্থারই বিশ্বাসযোগ্য একাধিক সূত্রের মাধ্যমে তথ্য যাচাই না করে কোন একটি সংস্থার দেয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। যদি সেটা না করা হয় তাহলে সেটা সমস্যার গুরুত্বকে কমিয়ে দেয়। আবার এটিও মনে রাখতে হবে যে কোন সংস্থার দেয়া একটি পরিসংখ্যানের ভুল মানেই তাদের তোলা সমস্ত তথ্য ভুল; ব্যাপারটা এমন না-ও হতে পারে।

আমি মনে করি যে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে হিউম্যান রাইট ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভূমিকা ন্যায্য ছিল না। এই দুটি সংস্থা ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো না। এবং বাংলাদেশে সংগঠিত নজিরবিহীন গণহত্যার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে এই সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক।

যাই হোক এটা সত্য যে মানবাধিকার ইস্যুতে কাজ করা সংস্থাগুলোর উচিৎ তাদের তথ্যের উত্স বিচারের ক্ষেত্রে আরও যতœশীল হওয়া। তবে এর অর্থ এই নয় যে জাতিসংঘের উত্থাপিত উদ্বেগকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া যাবে না। ভুক্তভোগীদের মনের যন্ত্রণা, দুঃখ এবং ভয়কে নিঃসন্দেহে যতœ ও শ্রদ্ধার সাথে সমাধান করা উচিত।

ইন্ডিয়া টুডে: বাংলাদেশের একটি রক্তাক্ত অতীত আছে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে অন্তত ১৯টি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। জেনারেল এরশাদের শাসনামলেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করি আমরা। তারপর ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বেগম জিয়ার অধীনে মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন হয়। এছাড়া, ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের হাতে নজিরবিহীন সহিংসতার কথা আমরা সবাই জানি। এইসব বিষয়কে বিবেচনায় না নিয়ে শুধু একপাক্ষিকভাবে আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা কি আপনি ন্যায়সঙ্গত মনে করছেন?

সুলতানা কামাল: দেখেন আমি মনে করি না যে অতীতের অন্য অপরাধীরা খারাপ কাজ করেছিল বলে বর্তমান সময়ে সংঘটিত অপরাধগুলিকে উপেক্ষা করার বা অস্বীকার করার কোন সুযোগ আছে। গুমের মত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে আজ যেই প্রতিষ্ঠানটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেই গুম বন্ধ করার জন্য কিন্তু বাংলাদেশের সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর বারবার প্রতিবাদ ও দাবি জানিয়ে গেছে।

অতীতে অন্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি বলে বর্তমান অপরাধীদের অপরাধ বাতিল হয়ে যায় না।

ইন্ডিয়া টুডে: বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলার বিষয়ে ডেইলি স্টার সহ বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো।

সুলতানা কামাল: হ্যা, এজন্য বিএনপির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করার কারণে ইতোমধ্যে দেশে বিএনপির ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইন্ডিয়া টুডে: আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ট্র্যাক রেকর্ড দেখে আপনি কি মনে করেন না শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ বেশি নিরাপদ?

সুলতানা কামাল: একটি সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায়পরায়ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার একটি প্রশংসনীয় অঙ্গীকার আওয়ামী লীগের ছিল। তবে এসব অঙ্গীকারের কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কেবল প্রমাণের ভিত্তিতে কথা বলতে পারি।

দল-মত নির্বিশেষে ভিন্নমতকে দমন করতে পরপর ঘটে যাওয়া বলপূর্বক গুমের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ভীতিকর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই ধরনের হুমকির মুখে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সুস্পষ্ট দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রের। এসব মামলার সঠিক ও কার্যকর তদন্তের জন্য সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, গণমাধ্যম এবং খোদ সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক।

Exit mobile version