Site icon Doinik Bangla News

রং ফিরেছে লাল গালিচায়

বসন্ত ফিরে এসেছে হলিউডে। বছরের শুরু থেকে কালো আর সাদায় চাপা পড়েছিল এর রঙিন তারকাজগৎ। বড় বড় পুরস্কারের আসরগুলোতে রঙিন ছিল শুধু গালিচার লাল রংটাই। কর্মক্ষেত্রে নারীর ওপর যৌন হয়রানির প্রতিবাদে তারকারা ঝরিয়ে দিয়েছিলেন রং। বহুদিন পর অস্কার আসরে এসে বদলে গেল সেই চিত্র। আবার রং ফিরে এল লাল গালিচায়। কালো পোশাক আর সাদা গোলাপের প্রতিবাদের রীতি থেকে বেরিয়ে এলেন হলিউডের তারকারা। গত রোববার রাতে ৯০তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের লাল গালিচা যেন রঙের ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেল আবার। একাডেমি অব মোশন পিকচার অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

মেরিল স্ট্রিপ পরেছিলেন লাল গাউন, নিকোল কিডম্যান নীল। জেনিফার লরেন্স আর স্যান্ড্রা বুলক দুজনের পোশাকের রংই ছিল সোনালি আর কালোয় মেশানো। এমনকি মিরা সরোভিনো ও অ্যাশলে জুডের মতো নিজেদের হয়রানি নিয়ে মুখ খোলা অভিনেত্রীরাও প্রতিবাদের সাদা-কালো রং থেকে বেরিয়ে গত রোববার রাতে রঙিন হয়েছিলেন। তবে রঙিন পোশাকের ওপর কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ‘টাইমস আপ’ পিন আর যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র আইন কঠোর করার দাবিতে ‘অরেঞ্জ’ পিন হয়েছে অনেক তারকার প্রতিবাদের ভাষা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে গত রোববার স্থানীয় সময় রাত আটটায় (বাংলাদেশ সময় গতকাল সকাল সাতটা) বসেছিল এ আসর। মূল অনুষ্ঠানের এক ঘণ্টা আগে থেকে শুরু হয় লাল গালিচা পর্ব। অস্কার অনুষ্ঠানের দিন কয়েক আগে থেকেই কৌতূহল অনেকের, অস্কারের লাল গালিচায় এবার কোন কায়দায় প্রতিবাদে মুখর হবেন তারকারা—কালো পোশাক নাকি সাদা ফুল? তবে মূল আসরের ঠিক এক দিন আগে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গঠিত তহবিল ‘টাইমস আপ’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার আর পোশাকি প্রতিবাদ নয়। এই ঘোষণাই বলে দিয়েছিল, লাল গালিচায় ফিরে আসছে রং।

বছরের শুরুতে গোল্ডেন গ্লোব, গ্র্যামি ও বাফটার মতো সম্মানজনক পুরস্কার আসরের লাল গালিচায় তারকারা নানাভাবে প্রতিবাদ করেছেন। জানুয়ারির শুরুতে গোল্ডেন গ্লোব দিয়ে এর শুরু। সেখানে সবাই পরে আসেন কালো পোশাক। তার সঙ্গে ‘টাইমস আপ’ লেখা পিন। এরপর গ্র্যামি আসরে ‘টাইমস আপ’ পিনের ব
দলে আসে সাদা গোলাপ। ফেব্রুয়ারিতে ব্রিট অ্যাওয়ার্ড ও বাফটার মতো আসরেও ছিল কালো পোশাক আর সাদা গোলাপের আধিপত্য। অবশেষে অস্কার সেই ধারার সমাপ্তি ঘটাল।

তবে প্রতিবাদের ভাষা রুদ্ধ হয়নি। পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ ও গিয়েরমো দেল তোরো এবং অভিনেতা স্যার প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট ও স্যাম রকওয়েলের মতো তাবড় ব্যক্তিত্বের পোশাকে ছিল ‘টাইমস আপ’ পিন। কারও কারও পোশাকে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কমলা পিনও। অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক লিন-ম্যানুয়াল মিরান্ডা ও অভিনেত্রী হুপি গোল্ডবার্গের মতো কয়েকজন তারকা পরেছিলেন কমলা রঙের বিশেষ ব্যাজ বা পিন। এই পিন পরে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র আইনের কঠোরতা বাড়ানোর চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি সহমর্মিতা জানিয়েছেন ১৪ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের উচ্চবিদ্যালয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায়।

অস্কার আসরের লাল গালিচা পর্বে সবার হঠাৎ রঙিন হয়ে ওঠা অনেককেই হতবাক করেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য বিতর্কও জমে ওঠে। টুইটারে একজন লেখেন, ‘হলিউড কি তাহলে হার্ভি ওয়াইনস্টিন আর কেভিন স্প্যাসিদের যৌনকাণ্ড ভুলে গেল?’ না, হলিউড যে ভোলেনি অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর সে দ্বিধা কেটে যায় দর্শকদের। একাডেমি কর্তৃপক্ষ একটি অডিও-ভিজ্যুয়ালের মধ্য দিয়ে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি, নারী-পুরুষের পারিশ্রমিক বৈষম্য ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে। মঞ্চে ‘টাইমস আপ’ উদ্যোগ নিয়ে বলেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাশলে জুড ও সালমা হায়েকের মতো অভিনেত্রীরা। এমনকি সঞ্চালক জিমি কিমেলও ব্যঙ্গ করেছেন যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা হলিউডের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ছাড়েননি। গত আসরের মতো এবারও ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বিদ্রূপাত্মক মন্তব্যের মধ্য দিয়ে মিলনায়তনভর্তি দর্শকের কাছ থেকে বাহবা কুড়িয়ে নেন।

তবে অস্কার-রাতে বাহবা কুড়ান শেষ পর্যন্ত শিল্পী আর কলাকুশলীরা। এবার বাহবা কুড়িয়েছে দ্য শেপ অব ওয়াটার, ডানকার্ক, থ্রি বিলবোর্ডস এবিং, মিশৌরি, ডার্কেস্ট আওয়ার, ব্লেড রানার ২০৪৯ ও কোকোর মতো ছবি। সর্বোচ্চ ১৩টি মনোনয়ন পাওয়া দ্য শেপ অব ওয়াটার জেতে চারটি অস্কার। অস্কার-রাতের সবচেয়ে বড় সম্মাননা সেরা ছবির পুরস্কার ছাড়াও জিতেছে আরও তিনটি পুরস্কার। ডানকার্ক জিতেছে তিনটি, তবে কারিগরি বিভাগে। বাকি ছবিগুলো দুটি করে অস্কার ঘরে তুলেছে। উইনস্টন চার্চিলের চরিত্রে অভিনয় করে ডার্কেস্ট আওয়ার ছবির জন্য সেরা অভিনেতার অস্কার পেয়েছেন গ্যারি ওল্ডম্যান। থ্রি বিলবোর্ডস এবিং, মিশৌরি ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রী বিভাগে ৬০ বছর বয়সী ফ্রান্সেস ম্যাকডরম্যান্ড জিতেছেন তাঁর অভিনয়জীবনের দ্বিতীয় অস্কার। একই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতার অস্কার জিতেছেন স্যাম রকওয়েল। আর আই, টনিয়া ছবির একমাত্র অস্কারটি জিতেছেন অ্যালিসন জ্যানি, পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে।

Exit mobile version