শিক্ষকরা আজ কোথায়? দায় কার..?

বিশেষ প্রতিবেদনঃ

শিক্ষকদেরকে সারাজীবন শ্রদ্ধা করে এসছি। নিজের শিক্ষকতো বটেই, অন্য শিক্ষকদেরও। তবু আজ শিক্ষকদের উপর কেন এত হামলা বা অপমান?
..
এজন্য আমরা সবাই, সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষই কম বেশি দায়ী। আমি আমার দায়ও নিচ্ছি, যদি কোথাও কোনো ব্যর্থতা থেকে থাকে দায়িত্ব পালনে। (যদিও নকল বা বাল্য বিয়ে বা ইভটিজিং বন্ধে শিক্ষকের ভূমিকা থাকায় যখন যেখানে শিক্ষক আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেখানে জেল জরিমানা করে নিজে স্বশরীরে গিয়ে সুরক্ষা ও সম্মান দিয়েছি। )।

এরপরেও আমি শিক্ষকদেরকেই বেশি দায়ী করবো। নিজেরা নিজেদের কর্তব্যে ছাড় দিতে দিতে, দায়িত্ব অবহেলা করতে করতে, নিজেদের অবস্থানকে ঢিলে করতে করতে নিজেদেরকে এ অবস্থানে নিয়ে এসছেন। আর কিছু শিক্ষক নিজের আর্থিক লোভ, অদক্ষতা, ব্যক্তিত্বহীনতা ও দলাদলিতে লিপ্ত হওয়ার হীনতা দিয়ে বাকি সব শেষ করেছে। পাঠক্রম, পাঠ্যসূচী, বইয়ের টেক্সট, পাঠপদ্ধতি, পরীক্ষার সংখ্যা ও পরীক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে ম্যানেজিং কমিটিতে নিজেদের অবস্থান সুসংহত রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন শিক্ষক সমিতিগুলো।
………
নিচের দুটো গল্প এখানে পরোক্ষভাবে হলেও প্রাসঙ্গিক।
………
১।
” যখন ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের জন্য এসেছিল, আমি কোনো কথা বলিনি,
কারণ আমি কমিউনিস্ট নই।
তারপর যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেল, আমি নীরব ছিলাম,
কারণ আমি শ্রমিক নই।
তারপর ওরা যখন ফিরে এলো ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে ভরে মারতে,আমি তখনও চুপ করে ছিলাম,
কারণ আমি ইহুদি নই।
আবারও আসল ওরা ক্যাথলিকদের ধরে নিয়ে যেতে,আমি টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করিনি,
কারণ আমি ক্যাথলিক নই।
শেষবার ওরা ফিরে এলো আমাকে ধরে নিয়ে যেতে,
আমার পক্ষে কেউ কোন কথা বলল না, কারণ, কথা বলার মত তখন আর কেউ বেঁচে ছিল না।”
(অনেক শিক্ষক ভেবেছিল যে অন্যের সন্তান পড়াশোনায় ভালো না হলে, নীতিবান না হলে, ভদ্র না হলে, মানুষ না হলে আমাদের কী? অভিভাবকরা ভূক্তভোগী হবে, সমাজ ভূক্তভোগী হবে। কিন্তু পরিণামে শিক্ষকরাও এখন ভূক্তভোগী।)
……….
২।
একটি পাত্রে জল গরম করার সময় হঠাৎ একটি ব্যাঙ সেই পাত্রে লাফ দিয়ে পড়লো এবং জলও গরম হতে শুরু হয়ে গেল। জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ব্যাঙটিও তার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে সহনীয় পর্যায়ে নিতে শুরু করলো, যদিও সে চাইলেই লাফ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারতো কিন্তু সে লাফ দিলো না এবং সে পরিস্থিতি সহ্য করতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে তাপমাত্রা যখন আরও বাড়িয়ে ফুটন্ত গরম করা হয় তখন ব্যাঙটি আর সহ্য করতে না পেরে সে সিদ্ধান্ত নেয় লাফ দেওয়ার, কিন্তু তখন আর তার লাফ দেওয়ার মত শক্তি থাকে না। জল আরও গরম হতে থাকে যার ফলে সে গরম জলে ফুটে ফুটে একটা সময় মারা যায়।
এখন যদি প্রশ্ন করা হয় ব্যাঙটি কিভাবে মারা গেছে ? তাহলে অধিকাংশ মানুষই বলবেন গরম জলের কারনে মারা গেছে। কিন্তু না, সে গরম জলের জন্য মারা যায়নি সে মারা গেছে লাফ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেরিতে নেওয়ার কারনে। ঠিক তেমনি প্রতিটি মানুষের স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বা যৌবন সময়ে একেকটা বিষয়ে সহ্য করার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের বুঝতে হবে কখন সঠিক সময়ের সিদ্ধান্ত সঠিক সময় নেওয়া উচিত।
.
(শিক্ষক সমিতিগুলো পদবি/বেতন বাড়ানোর জন্য যেমন একাট্টা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও শিক্ষা পদ্ধতিতে তাঁদের অবস্থান সুসংহত করতে ততটা একাট্টা নয়। ).
.
নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না, আর What goes around, comes around. যা কিছু আশেপাশে ঘটে তার কোনো না কোনো প্রভাব আমাদের উপরে পড়ে। ‘‘সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হোক, আমি কিছু বলবো না‘‘ ভাবলে একদিন নিজের উপরেও আসবে।
(বাই দ্যা ওয়ে, কেবল কি শিক্ষকদের এ অবস্থা? অন্য শ্রেণী পেশার মানুষেরও একই অবস্থা!)

জগতের সকল শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মীতা।

….
ড. সফিকুল ইসলাম।

লেখক ও গবেষক

Leave a Reply