Site icon Doinik Bangla News

২১শে আগস্ট ; জাতির আরেকটি কলংকময় দিন

রথীন্দ্র রায় সোহাগ, স্টাফ রিপোর্টারঃ

২০০৪ সালের ১৭ই আগস্ট সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকেল পাঁচটায় পৌঁছালে, একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে তিনি কুড়ি মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও ১২ জন নিহত হন। ২৪ জন নিহত এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হয়। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভি রহমান অন্যতম, যিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী। বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল আহসান পাপন এম পির মাতা।
ওই হামলার ঘটনায় দুইটি মামলা করা হয়, একটি হত্যা মামলা এবং একটি বিস্ফোরক আইনের মামলা।
মামলায় মোট আসামি ৪৯ জন, এর মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ৩১জন, এবং তারেক রহমানসহ ১৮জন আসামি পলাতক রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন ২২৫ জন মানুষ। অন্যদিকে, আসামি পক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন ২০ জন।
গ্রেনেড হামলার সময় এবং তারপরের তদন্ত নিয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে।
জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল সেসময়ে।
২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় পুনরায় তদন্ত হয়।
সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল-জিহাদ-আল-ইসলাম নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর নাম আসে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে পুনরায় তদন্ত শুরু হয়।
ঐ তদন্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং পুলিশের সাবেক তিনজন মহাপরিদর্শক বা আইজিপি’র নাম আসে।
বিএনপি অবশ্য ঐ তদন্তকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক’ বলে বর্ণনা করে।
তদন্তে বেরিয়ে আসে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।
হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড এসেছিল পাকিস্তান থেকে।

২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত ২টি মামলায় ১৯ জনকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড এবং আরো ১৯জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর,
উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু,
ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী,
এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম,
মাওলানা শেখ আবদুস সালাম,
মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট,
আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম
মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ
মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি
মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর
আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল
মো. জাহাঙ্গীর আলম
হাফেজ মাওলানা আবু তাহের
হোসাইন আহমেদ তামিম
মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ
মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ
মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন
জঙ্গিনেতা মাওলানা মো. তাজউদ্দীন
হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ ১৯ আসামিকে আবার ১৯৮০ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৪ ও ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০ বছর কারাদণ্ড ও আরও জরিমানা ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-
শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল (উপস্থিত)
মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব (উপস্থিত)
মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির (উপস্থিত)
আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক (উপস্থিত)
হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া (উপস্থিত)
আবু বকর ওরফে হাফে সেলিম হাওলাদার (উপস্থিত)
মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ (উপস্থিত)
মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক)
আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক)
মো. খলিল (পলাতক)
জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক)
মো. ইকবাল (পলাতক)
লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক)
তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক)
হারিছ চৌধুরী (পলাতক)
কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক)
মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক)
মুফতি আবদুল হাই (পলাতক)
রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।
দণ্ডপ্রাপ্ত এ ১৯ আসামিকে যাবজ্জীবন ছাড়াও ১৯৮০ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৩ ও ৪ ধারায় সাব্যস্ত করে আরও ২০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

 

Exit mobile version