আওয়ামীলীগে হাইব্রিডের অবস্থান

মোঃ কাশেদুল হক কাজলঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর বাকী এক বছরের কিছু বেশী সময়। এর মধ্যে রাজনৈতিক মাঠ হয়ে উঠছে গরম ও উত্তেজিত। বিরোধী দলের মতে, তৃণমূল কর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে। সরকারী ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের মাঝে চলছে বাক যুদ্ধ। আক্রমন-পাল্টা আক্রমন। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কেউ কেউ সরকারকে দিন ক্ষণ দিয়ে আল্টিমেটামও দিচ্ছে। আছে আন্দোলনের কর্মসুচীও। এই আন্দোলনের কর্মসূচী সফল কি ব্যর্থ এ নিয়ে চলছে নানা আনাগোনা। চায়ের টেবিলে আনাছে কানাছে চোখে পড়ছে রাজনীতির বিশ্লেষণ।

স্বাধীনতা বিরোধীসহ দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা ছোবল মারার জন্য ফনা তুলছে। চলছে সরকার উৎক্ষাতের নানা কুট কৌশল। এ তথ্য এখন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। এক দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বৈশ্বিক  প্রভাব। দ্রব্যমূলের লাগাম হীন উর্দ্ধগতি। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি এখন বিরোধী দলের আন্দোলনের নিয়ামক শক্তি। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি ও বিদ্যুতের লোড শেডিং বিরোধী দলের আন্দোলন আরো শক্তিশালী করে দিল। যার ফলে বি.এন.পি নেতৃবৃন্দ যতটুকু আশা করেছিল, তাদের আন্দোলনে তার চেয়েও বেশী সাড়া পায়। তারা ক্ষমতার চেয়ারে বসার স্বপ্ন দেখা শুরু করে দেয়। কেউ কেউ রাতে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপি হওয়ার সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হিসাবে স্বপ্ন দেখা শুরু করে। সুশীল সমাজও ক্ষমতার চেয়ারে কিংবা ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। সুশীল সমাজের স্বপ্ন দেখা মানে তারা নির্বাচনের বাহিরে চোরা গলি শর্টকাট রাস্তায় ক্ষমতায় যেতে চায়। রাত-দিন বিভিন্ন হোটেল রেষ্টুরেন্টে বিদেশী কুটনীতিকদের সাথে আড্ডা। প্রমান করার চেষ্টা করে যে, তারা দেশের মহাজ্ঞানী। নিজেদেরকে রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে যোগ্যতা প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা।

গত ৩ সেশন রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষ শেখ হাসিনা সরকারের সমস্ত উন্নয়ণ ও সফলতাকে বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকদের কাছে ব্যর্থ হিসাবে উপস্থাপন করা। দেশে গুম খুন ও সুশাসন নিয়ে নানা অভিযোগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সুশীল সমাজ আসলে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করে না। এরা মনে হয় রাজনৈতিক কোন পক্ষ হইতে আর্থিক লাভবান হয়ে এহেন দৌড়াদৌড়ি করছে এবং দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের পক্ষে কাজ করছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদকের কার্যক্রম আরো ব্যাপক ভাবে চালু করলে হয়তো থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে পারে। বিরোধী দলের প্রত্যেক নেতা কর্মীদের মাথার উপরে অসংখ্য মামলা মোকদ্দমা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কতটুকু অগ্রসর হতে পারবে তা খোদ বি.এন.পি নেতারাই সন্দিহান। তাই ঝুকে পড়েছে, কুটনীতিকদের প্রতি। লবিস্ট হিসাবে কাজ করছে সুশীল সমাজ।

বিরোধী দলের আন্দোলনের সফলতা কোন দিকে মোড় নেয় তা ভবিষ্যতে জানা গেলেও বিরোধী দলের আন্দোলনে একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়- তা হলো বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বি.এন.পির ডাকা সভা সমাবেশে প্রচুর জন সমাগম লক্ষ্য করা যায়। এই জন সমাগম টেনে ধরার চেষ্টা যে, আওয়ামীলীগ করছে না, তা কিন্তু নয়। আওয়ামীলীগ স্বীকার না করলেও হরতাল, ধর্মঘটের নামে বিরোধী দলের সমাবেশ গুলিতে জনসমাগম টেনে ধরার কৌশল কিন্তু জনগণ বুঝতে পেরেছে।

টানা ৩ সেশনে অর্থাৎ ১৪ বছর যাবৎ রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামীলীগ সরকার তথা মাননীয় শেখ হাসিনার নেতেৃত্বে বর্তমান সরকার অবকাঠামো সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সফলতা ও উন্নয়ন দেখালেও জনগন কেন মুখ ফিরিয়ে নেয়? বর্তমান সরকারের আমলে এমন এমন উন্নয়ন মূলক কাজ সফলতার সাথে সম্পন্ন করা হয়েছে, যাহা বিশ্ব মোড়লরা ছাড়াও খোদ আওয়ামীলীগের নেতারাও এসব মেঘা প্রকল্পের কাজগুলি সফল ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে বলে সন্দিহান ছিল। একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস ও দূরদর্শিতার কারনে একাজ গুলি সফল ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। জাতিকে শিখিয়েছে মাথা উঁচু দাঁড়াবার।

এখন প্রশ্ন জাগে, আওয়ামীলীগ সরকারের এত উন্নয়ন, সফলতার পরও কেন বিরোধী দলের জনসভায় প্রচুর লোকের জনসমাগম হবে? এ প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলেন, টানা ৩ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের নেতারা দলীয় আদর্শের বৃত্তের বাহিরে চলে গেছে। কিছু কিছু নেতার লাগামহীন দুর্নীতি, অপশাসন, স্বেচ্ছাচারিতা এবং দলের ভিতর বিরাজমান দলীয় কোন্দল, তৃণমূল পর্যায়ে দলের আদর্শিক নেতাদের মূল্যায়ণ না করে দলের নেতাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে  জামাত-বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারীদেরকে মূল্যায়ন করাকে দায়ী করেন।

দলীয় নেতাদের আন্ত-কোন্দলের জেরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে নিজের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে প্রত্যেক নেতা আওয়ামীলীগের পাশাপাশি আরেকটি ভাই লীগ সৃষ্টি করেছেন। এই ভাই লীগে স্থান করে নিয়েছে বিএনপি-জামাতসহ বিভিন্ন দল থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীরা। যাদেরকে হাইব্রিড আওয়ামীলীগ বলা হয়। যাদের মাঝে দলীয় আদর্শ বলতে কিছু নাই। এই আওয়ামীলীগ বনাম ভাইলীগের মাঝে ক্ষমতার আধিপত্যের লড়াইয়ে আদর্শিক আওয়ামীলীগের নেতারা হয়ে পড়ে কোন ঠাসা, বিভিন্ন আসনে এই ভাই লীগই সত্যিকার অর্থে তৃণমূল আওয়ামীলীগ দখল করে আছে। এই ভাইলীগের মাঝে আছে বি.এন.পি, জামাত অনুসারী সুবিধাবাদী তেলবাজসহ যত অবৈধ কারবারীরা। এদের কোন দলীয় আদর্শ নাই। শুধু বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় থেকে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া ও অবৈধ অর্থ বিত্ত তৈরী করাই এদের কাজ। দলের বদনামে এদের কিছু যায় আসে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে এরা আবার পুরানো রূপে আবির্ভূ ত হচ্ছে। এই ভাই লীগই আওয়ামীলীগের জন্য কাল সাপ হয়ে দাঁড়াবে। এদের নিবাচনী মার্কা নৌকা নয়। বড় ভাই যে মার্কায় নির্বাচন করে, তাদেরও মার্কা সেটাই।

আওয়ামীলীগের এমন অনেক এমপি আছেন, যারা নৌকার কারনে বিভিন্ন আসনে আজ বড় নেতা হয়েছেন, বড় নেতা হয়ে একটি ভাইলীগ সৃষ্টি করেছেন। কোন কারনে যদি তাদেরকে নৌকা প্রতীকে নমিনেশন দেওয়া না হয়, তাহলে এরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবে। আর ভাইলীগের লোকেরা উনাদের হয়ে কাজ করবে। বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে তার প্রমান ও পাওয়া যায়। আর তৃণমূল আদর্শিক নেতারা আওয়ামীলীগের ১৪ বছরের শাসনামলে অবমূল্যায়ন সহ অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর প্রতিফল আগামী নির্বাচনে দেখা যেতে পারে। ভাইলীগ সৃষ্টিকারী নেতাদেরকে এরা আগামী নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করবে বলে আগাম আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থা যে, শুধু দুই একটি আসনে, তা নয়। অনেক আসনেই এই ভাই লীগের দৌড়াত্মে কোন ঠাসা শেখ হাসিনা তথা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ।

আগামী নির্বাচনে নমিনেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ভাইলীগ সৃষ্টিকারী নেতাদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে আওয়ামীলীগ বনাম ভাইলীগ যুদ্ধে বিরোধী দলের পক্ষে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখা দিতে পারে।

Leave a Reply