আগামী দিনের অনুবাদ

নতুন বছরে নতুনের আবাহনে সবাই নিজের মুখোমুখি হন, করেন নতুন পরিকল্পনা। লেখকেরাও এর বাইরে নন। এই আয়োজনে খালিকুজ্জামান ইলিয়াস লিখেছেন ২০১৮ সালে লেখালেখি নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা

সময় যত চেপে আসছে, শক্ত চোয়াল হাঁ করে যতই নিকটতর হচ্ছে, ততই যেন সময়েরই শাখা-প্রশাখা দিনক্ষণে আরও বেশি করে ঝুলে থাকতে ইচ্ছে করছে। আমার তো বিত্ত নেই কিছুই, তেমন কর্মযজ্ঞও নেই যে বলব, গ্রিক বীর অডিসিয়াসের মতো বলব যে, আর কী নিবি আমার? যা ছিল সবই আমি চুষে খেয়ে ছিবড়ে করে ফেলেছি; কিংবা বিলিয়ে দিয়েছি অকাতরে। এখন যা পারি তা কেবল আমারই ফেলে রাখা উচ্ছিষ্ট, কঙ্কাল। না, সে কথা বলার উপায় আমার নেই। আবার বার্গসঁর মতো রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে পথচারীদেরও বলতে পারব না, ভাই, আমার আরও সময় দরকার। যদি আপনাদের প্রত্যেকের জীবন থেকে মাত্র কয়েকটা মিনিট আমাকে ভিক্ষে দেন তো তা-ই আমার জন্য যথেষ্ট; আরও কয়েকটা বছর বেঁচেবর্তে আমার কাজ শেষ করে যাব। না, এমনটি করতেও আমার বাধে, নিজেকে স্বার্থপর মনে হয়। তার চেয়ে বরং প্রকৃতি যে কয়েকটি বছর আমার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থেকে কী দিইনি আর কী দিয়েছি, সে হিসাব না করে সাধ্যমতো কাজ করে যাওয়াই আমার ব্রত।

এই ব্রততে বলীয়ান হয়ে আগামী দু-চার বছরে বিশ্বসাহিত্যের আরও অন্তত গোটা চারেক চিরায়ত উপন্যাস বা মহাকাব্য অনুবাদ করতে চাই আমি। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে আমার মনপ্রাণজুড়ে থাকা গ্রিক মহাকবি ও ঔপন্যাসিক নিকোস কাজান-জাকিসের কিছুই অনুবাদ করিনি। তাঁর একটা উপন্যাস কিংবা আত্মজীবনী কিংবা মহাকাব্য অডিসি: একটি আধুনিক উত্তরকাণ্ড অনুবাদ করতে পারতাম তো একটা কাজের কাজ হতো। রুশোর স্বীকারোক্তি এবং সার্ভেন্তেসের দন কিহোতে অনুবাদ করার ইচ্ছে আছে। যদিও এসবই আমাকে করতে হবে ইংরেজি অনুবাদ থেকে; যেহেতু ফরাসি, স্প্যানিশ ও গ্রিক—তিনটি ভাষাই আমার কাছে গ্রিক, অর্থাৎ দুর্বোধ্য; কিন্তু এদের ইংরেজি অনুবাদ খুব বিশ্বস্ত ও অথেনটিক বলেই জানি। তাই একটি বিশ্বস্ত অনুবাদ থেকে করা আরেকটি বিশ্বস্ত অনুবাদ মূল রচনা থেকে খুব একটা সরে যায় না বলেই আমার বিশ্বাস।

অনুবাদ ছাড়াও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লুকিয়ে থাকা কয়েকটি প্রবন্ধ নিয়ে অন্তত একটি প্রবন্ধের বইও বের করতে চাই। এ ছাড়া আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পগুলোর ইংরেজি অনুবাদেরও একটা বই করার ইচ্ছে আমার বহুদিনের। অনেকেই এই সব গল্প অনুবাদ করেছেন এবং ছেপেছেনও। এদের মধ্য থেকেই নির্বাচন করে এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করব। কিন্তু এত সব করতে গেলে প্রথমেই আমাকে শিক্ষকতা ছাড়তে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে তিন সেমিস্টারের প্রতিটিতে দেড় শ ছাত্র পড়িয়ে সাহিত্য কর্মে মন দেওয়া প্রায় অসম্ভবই। অবসরজীবনে কেবলই লেখালেখি করতে পারলে মন্দ হয় না এবং আগামী বছর থেকে এমনটিই আমার ইচ্ছে।

Leave a Reply