‘আমরা সাধারণ মানুষ কেন রাজনীতির শিকার হব?’

চোখের সামনে স্বামী ও সন্তানকে পুড়ে মরতে দেখেছেন মাফরুহা বেগম। সে দৃশ্য তিনি এখনো ভুলতে পারেননি। তাঁর দিন-রাত কাটে কেঁদে কেঁদে। তাঁর প্রশ্ন, ‘আমরা সাধারণ মানুষেরা কেন রাজনীতির শিকার হব? কেন জীবন্ত মানুষ আগুনে পুড়ে কয়লা হবে? কী অন্যায় করেছিল আমার ছোট্ট মাইশা?’

গতকাল রোববার সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এভাবেই স্বজন হারানোর কথা বলছিলেন মাফরুহা বেগম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতায় কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তাঁদের গাড়িতে পেট্রলবোমা ছোড়া হয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে ৪৬ বছর পর কেন এই মানুষ পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখছি? যারা হিংসার আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারে, তারা ঘৃণার আগুনে পুড়ে মরছে। যারা মানবিকতাকে অপমান করেছে, যারা নারকীয় বর্বরতায় মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, তারা বাংলার মাটিতে এখন কোন মুখে জনগণের ভোট চায়?’

আলোচনার আগে জাতীয় চিত্রশালার ৬ নম্বর গ্যালারিতে ফিতা কেটে ‘বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সেতুমন্ত্রী। দশম জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সহিংসতার ২৫০টির বেশি ছবি ও একটি ভিডিও তথ্যচিত্র নিয়ে এই প্রদর্শনী। আজ সোমবার বিকেল পাঁচটায় এই প্রদর্শনী শেষ হবে।

প্রদর্শনী নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি বর্বরতার চিহ্ন দেখে। দেখে মনে হলো না, স্বাধীন বাংলাদেশে ২০১৪ সালে এ রকম সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এটা ঠিক ১৯৭১ সালের মতো ঘটনা। সে সময় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে আমরা পরাজিত করেছি। কিন্তু তাদের দোসররা এখনো বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। এখনো এই স্বাধীন দেশে রক্তের হোলি খেলা চলছে।’ সভাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। সভায় পাঁচজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তাঁদের স্বজন হারানো ও সহিংসতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এই পাঁচজনকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার চেক দেওয়া হয়।

আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, ‘পাকিস্তান ১৯৭১ সালে যা করেছিল, তারই প্রতিচ্ছবি এই সময়টাতে, যা বিএনপি-জামায়াত করেছিল। এটির একটি প্রচারণা দরকার। প্রচার করা হলেই বিএনপি-জামায়াতের চেহারা সবাই জানতে পারবে। আমাদের হাতে সময় কম, নির্বাচনের আর খুব বেশি দিন নেই। জনমত তৈরি করতে এখনই এগুলো প্রচার করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, এটা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এই প্রদর্শনীতে সেই সহিংসতার খণ্ডচিত্র দেখানো হয়েছে।

Leave a Reply