আলোচনায় সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক

উদ্ধৃতিঃ বাংলা ইনসাইডার:

বিচারপতি খায়রুল হক, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি। তার হাত ধরেই পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হয়েছিলো, তার হাত ধরেই বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছিলো। নানা ঐতিহাসিক মামলায় রায় দিয়ে তিনি বহুল আলোচিত। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব শেষ করে তিনি অবসরে যান এবং সেখান থেকে তাকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়েছিলো। আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন শেষে তিনি এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে বিচারপতি খায়রুল হকের নাম আলোচনায় এসেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশকে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। আর এপ্রিল মাসে আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন এই নতুন রাষ্ট্রপতি। তাই বিভিন্ন মহলে আগামী রাষ্ট্রপতি কে হবে, এ নিয়ে নানারকম আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচনায় যেমন রাজনৈতিক নেতাদের নাম আসছে, তেমনি আসছে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নাম।
আওয়ামী লীগ সরকার তার ৪ মেয়াদের শাসনামলে তিনজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছে। প্রথম দফায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছিলো বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে। তিনি প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন এবং এবং প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসরে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি করার অভিজ্ঞতা আওয়ামী লীগের সুখের ছিলো না। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচন করেন দলের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত অনুসারী জিল্লুর রহমানকে। জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদকে। আবদুল হামিদ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, একজন রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সেই হিসেবে আবদুল হামিদের আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই বাস্তবতায় আগামী রাষ্ট্রপতি কে হবে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে যেমন রাজনৈতিক নেতাদের নাম আসছে, তেমনি রাজনীতির বাইরে থাকা বিশিষ্টজনদের নাম আসছে।
বিচারপতি খায়রুল হকের নাম আসার অন্যতম কারণ হলো, তিনি সৎ, আদর্শবাদী একজন বিচারপতি হিসেবে পরিচিত। তিনি নীতির প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। তাছাড়া কয়েকটি ঐতিহাসিক মামলার রায়ের কারণে তিনি আলোচিত, প্রশংসিত। যদিও বিচারপতি খায়রুল হককে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের তীব্র আপত্তি রয়েছে এবং তার ব্যাপারে বিএনপি প্রকাশ্যে সমালোচনা করে। কিন্তু তারপরেও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশেষ করে একজন সৎ, আদর্শবান বিচারপতি হিসেবে তার যেমন সুখ্যাতি রয়েছে, তেমনি একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যাদেরকে সবচেয়ে সম্মানিত স্থানে রাখা তাদের মধ্যে বিচারপতি খায়রুল হক নিঃসন্দেহে অন্যতম। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে অতীতের অভিজ্ঞতা, দলের বাইরে কাউকে রাষ্ট্রপতি করলে তিনি কতটুকু বিশ্বস্ত থাকবেন এবং সংকটকালে কতটুকু দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন সেই উপলব্ধি থেকে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি খায়রুল হককে রাষ্ট্রপতি করা হবে কি না তা নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে। কারণ, আগামী নির্বাচন এই রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বেই হবে। আর নির্বাচনের তফসিল যখন ঘোষণা করা হয় তখন সংবিধানের অন্তর্নিহিত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওঠেন। এইসব বাস্তবতায় আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখেই একজন নতুন রাষ্ট্রপতি সরকার বিবেচনা করবে। বিচারপতি খায়রুল হকের ক্ষেত্রে সেটি ইতিবাচক এ কারণে যে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিচারপতি খায়রুল হক গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবেন। তাছাড়া তার দেশে-বিদেশে সুনাম সরকার ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পারবে। আবার এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণকারীরা মনে করছেন, বিচারপতি খায়রুল হক যদি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হন তাহলে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার শেষ পথটুকুও বন্ধ হয়ে যাবে।

Leave a Reply