এ বছরের লেখালেখি

নতুন বছরে নতুনের আবাহনে সবাই নিজের মুখোমুখি হন, করেন নতুন পরিকল্পনা। লেখকেরাও এর বাইরে নন। এই আয়োজনে শাহাদুজ্জামান লিখেছেন ২০১৮ সালে লেখালেখি নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা

কারও কাছে প্রতিজ্ঞা করিনি, কোথাও দস্তখত দিইনি যে আমাকে এ বছর লিখতে হবে। তবু টের পাই, না লিখে আমার উপায় নেই। খুব ভেতরের একটা ঘুমিয়ে থাকা বাঘ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠে মনের কাছে বলে, অক্ষর সাজাও। অক্ষর আমাকে সাজাতে হবে, কারণ সেটা আমার জীবনকে মোকাবিলা করার উপায়। চারপাশের জীবন, সমাজ, সম্পর্ক আধো আলো আধো অন্ধকার মনে হয়। বুঝি, বুঝি না। বোঝার চেষ্টার তাড়না হয়। যে জীবনটা যাপন করছি, সেটাকে নানা দিক থেকে বুঝতে চাওয়ার চেষ্টা, সেই চেষ্টা অন্যের সঙ্গে সমবায় করার ইচ্ছা থেকেই লেখালেখি। লেখালেখি আমার জীবনচর্যার অংশ। ফলে এ বছরও লেখা আমার অব্যাহত থাকবে বলেই ধারণা করি।

নানা ভাবনাতাড়িত হয়ে নানা মাধ্যমে লিখেছি এযাবৎ। কখনো গল্প, কখনো উপন্যাস, কখনো বা প্রবন্ধ-নিবন্ধ। এ বছরও তেমনটা হবে বলে মনে করি।

আমার বেশ কিছু অগ্রন্থিত গল্প আছে, সেই সঙ্গে আরও কিছু নতুন গল্প জুড়ে একটা গল্পের বই প্রকাশের পরিকল্পনা আছে। জীবনের নানা দাবি আমাকে আমার অসম্পূর্ণ গল্পগুলো থেকে দূরে রেখেছে। অসমাপ্ত গল্পগুলো দ্রুত শেষ করে অচিরেই নতুন গল্পের বইটি প্রকাশের ইচ্ছা রাখি। লেখালেখির ক্ষেত্রে এ বছর আমার প্রধান সময় কাটবে একটা নতুন উপন্যাসের প্রস্তুতি ও খসড়া লেখায়। গত বছর আমার উপন্যাস একজন কমলালেবু প্রকাশিত হয়েছে। সারা বছর সেই বইয়ের পাঠ-প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। বইটি সফল না ব্যর্থ, এটি উপন্যাস না জীবনী না ইতিহাস—এ নিয়ে বিস্তর আলাপ, বিতর্ক দেখতে পেয়েছি। আমার জন্য এই সব বিতর্ক কৌতূহলোদ্দীপক, স্বাস্থ্যকর। আমার আগের উপন্যাস ক্রাচের কর্নেল নিয়েও এমন মত-দ্বিমত লক্ষ করেছি। এই সব পাঠ-প্রতিক্রিয়া আমার পরবর্তী লেখার ক্ষেত্রে কাজের। যে নতুন উপন্যাসটা লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তার ভাবনাগুলো মোটামুটি দানা বেঁধেছে। আমার আগের উল্লেখিত দুটি উপন্যাস ব্যক্তিত্বভিত্তিক এবং নিকট অতীত সময়ের প্রেক্ষাপটে। এইটুকু বলতে পারি, আমার নতুন উপন্যাস কোনো পরিচিত ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে নয় এবং তার প্রেক্ষাপট সমসাময়িক। এই সময়ের নানা ভাবনা, ঘটনার মিথস্ক্রিয়া ঘটবে সাধারণ কিছু চরিত্রের ভেতরে। তবে যে আঙ্গিকে উপন্যাস উপস্থাপিত হবে, সে ক্ষেত্রে আমার নিরীক্ষা হয়তো অব্যাহত থাকবে। প্রচলিত উপন্যাসের কাঠামোকে প্রসারিত করার ইচ্ছা আমার বরাবর। সেখানে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, দর্শনের উপাদান দেয়াল ভেঙে ঢুকে পড়লে আমি তাতে বাধা দিই না। পাঠের চেনা ভূগোলের বাইরের অভিযাত্রী হতে ক্ষতি কী? পেশার, সংসারের সব দাবি মিটিয়ে রাতে লিখতে বসি আমি। যদি পারি তো রাতে রাতে লিখে এ বছরই উপন্যাসটি শেষ করার ইচ্ছা রাখি।

এ বছর আমার সংযুক্ততা থাকবে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য এবং মঞ্চনাটকের পাণ্ডুলিপি রচনায়ও। আমার গল্প ‘মৌলিক’ ও ‘সাইপ্রাস’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে ইমরান নূর কমলা রকেট নামে, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায়। যৌথভাবে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য লিখেছি। ছবিটির চূড়ান্ত সম্পাদনার কাজ চলছে। এ ছাড়া আমার ‘ইব্রাহিম বক্সের সার্কাস’ গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রবিউল আলম রবি। তার সঙ্গে যৌথভাবে চিত্রনাট্য রচনার কাজ চলছে। রবি ইতিপূর্বে আমার ‘ঠাকুরের সঙ্গে’ গল্প অবলম্বনে একই পথে নামে একটি চমৎকার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে প্রজন্ম টকিজের ব্যানারে।

ক্রাচের কর্নেল উপন্যাসের মঞ্চরূপ দিয়েছে বটতলা নাট্যদল। এবার আমার আধো ঘুমে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে বইটি মঞ্চায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কথা হয়েছে ক্যাস্ট্রোর ভূমিকায় অভিনয় করবেন আলী যাকের এবং নাটকটির নির্দেশনা দেবেন আফসানা মিমি। এই নাটকের পাণ্ডুলিপি রচনায়ও যুক্ত থাকছি। এ ছাড়া সারা বছর নানা বিষয়ের টুকরো ভাবনা নিয়ে ‘চিরকুট’ নামে কলাম লেখা অব্যাহত থাকবে প্রথম আলোয়। হিসাব মোটামুটি এই, তবে হিসাব মেলানোর সব সূত্র তো আমার হাতে নেই।

Leave a Reply