কলকাতায় আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ

ভারতের আসাম থেকে বাংলাভাষীদের বিতাড়নের প্রতিবাদে গতকাল রোববার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের ছাতিমতলায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয় কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি।

সমাবেশে বক্তব্য দেন সমাজকর্মী অনুরাধা দেব, শ্রমিকনেতা বাসুদেব বসু, মানবাধিকারকর্মী বিমল শর্মা, সমাজকর্মী সুখনন্দন আলুওয়ালিয়া, সারুর আলম এবং ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ড. ইমানুল হক।

বক্তারা আসাম সরকারের এই ঘৃণ্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, বাংলাভাষীদের তাড়ানোর চক্রান্ত রোধ করতে হবে। এ দেশে সব মানুষের বাস করার অধিকার আছে। কিন্তু আসাম সরকার যেটা করছে, সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যুক্তরাষ্ট্রের চক্রান্তে এসব চলছে আসামে। এই যুক্তরাষ্ট্রে আগে জম্মু, কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। এবার দৃষ্টি ঘোরাতে বেছে নিয়েছে আসামকে।

সভাশেষে এই চক্রান্তের জন্য আসামের বিজেপি-দলীয় মুখ্যমন্ত্রীকে ধিক্কার জানিয়ে তাঁর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।

পশ্চিমবঙ্গের পাশের রাজ্য আসামে সম্প্রতি প্রকাশ করা হয় আসামের রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জির খসড়া। তাতে উঠে এসেছে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের নাম। যদিও আসামে নাগরিক পঞ্জির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা সুপ্রিম কোর্টে আগেই জানিয়েছিলেন, দুই কোটি নাগরিকের আবেদনপত্রের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করা হয়েছে। ৩৮ লাখ মানুষের নথিপত্রে সামান্য ত্রুটি থাকার কারণে পুনঃপরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই নথি পেশের পর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের। ফলে এই খসড়া প্রকাশের পর তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে নওগাঁসহ বরাক উপত্যকার বাংলাভাষীদের মধ্যে। দেখা যায়, বহু বাংলাভাষীর নাম ওঠেনি। সঙ্গে সঙ্গে তারা এই অভিযোগ তুলেছে যে বাংলাভাষীদের আসাম থেকে বিতাড়নের পাঁয়তারা চলছে।

আসামের নাগরিক পঞ্জিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের নাম ওঠে। ১ কোটি ৩৯ লাখ মানুষের নাম ওঠেনি। ফলে ৫৭ দশমিক ৪১ শতাংশের নাম উঠলেও বাকি থাকে ৪২ দশমিক ৫৯ শতাংশের মানুষের নাম।

এই তালিকা দেখে ক্ষুব্ধ হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বুধবার তিনি বীরভূমে এক সভায় বলেছেন, আসামে এখন বাঙালি খেদাওয়ের পাঁয়তারা চলছে। সেখানে যারা ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে বসবাস করছে, তাদের নাম ওঠেনি। মমতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না। আসাম-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে অশান্তি হলে তার প্রভাব পড়বে বাংলায়। আসামে সবাই বাঙালি খেদাও করছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। চক্রান্ত করে মানুষকে নিজের এলাকা থেকে সরানোর নোংরা চেষ্টা করছে বিজেপি।’

এদিকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ঘোষণা দিয়েছেন, নাগরিকত্বের সনদ না পেলে আসামে মিলবে না কোনো মৌলিক অধিকার। মমতার বক্তব্য বাস্তবতার বিরোধী।

Leave a Reply