কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌড়াত্বে হয়রানির কবলে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসের বিতর্কিত উপ-পরিচালক (ডিডি) নুরুল হুদাকে বদলির পর  নতুন ডিডির যোগদানের পরও কমেনি সেবাগ্রহীতার ও রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হয়রানি। দৌরাত্ম্য বেড়েছে দালালদের। পুলিশ আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। এবার টাকা নিয়ে সেবা না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোন ভেঙ্গেছে পুলিশ সদস্য। নতুন ডিডি জানিয়েছেন অভিযোগে পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গৌরিপুর থেকে আসা মোহাম্মদ শাহীন অভিযোগ করেন, সকাল ৬টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি গেইটের বাইরে। ৮টার পর গেটের ভেতরে প্রবেশ করি। লাইন আর সামনে যায় না। পুলিশ সদস্য, আনসার সদস্যরা সামনে এগিয়ে দেয়। তাই পুলিশ কন্সটেবল রেজাউল করিম স্যারকে বললাম- সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি বললেন- পাঁচশ’ টাকা দেও। পাঁচশ’ টাকা নিয়ে তিনি দূরে দূরে থাকেন। ওনাকে বললাম, স্যার কাজ না করলে টাকা দেন। তখন তিনি আমাদের দু’জনকে হুমকি দেন লকারে ডুকাবেন। তখন ৯৯৯ নম্বর কল দেওয়ার সময় হাত থেকে ফোন নিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন। এ বিষয়ে ডিডি স্যারের কাছে মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেছি।

বরুড়ার ঝলম থেকে আসা বাহাউদ্দিন বলেন, জরুরি চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া যাবো। লাইনে দাঁড়িয়েছি ভুল হয়েছে বলে জমা রাখেনি। একই পাসপোর্ট আবেদন বাবুল দালালকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন জমা রেখেছে, ছবি তুলতে যাবো। এ সময় বাহাউদ্দিন দুই কাগজের মাঝে স্টেপলারের নিচে নীল কালির দাগ দেখিয়ে বলেন। এটা ভাইয়ের কোড নম্বর। দালালের কোড নং না থাকলে, এটাকে অফিসের লোক আনারস ফাইল নামে ফেলে রাখে। যে কোন অজুহাতে হয়রানি করতে থাকে।

রবিবার গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে বাইরে কয়েকশ’ মানুষের জমায়েত। এখানে একটু পরপর একজন জিজ্ঞাস করে লাইন লাগবে না আসেন। ভেতরে প্রবেশ করতেই নজরে পড়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কর্ম তৎপরতা। আইন শৃঙ্খলায় দায়িত্ব থাকা সদস্যদের নিকট দৃশ্যমান নেই পরিচয়পত্র। পরিচয়পত্র দৃশ্যমান নেই পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের।

পাসপোর্ট অফিসের সামনে কথা হয় বাবুল নামের এক দালালের সাথে। তিনি জানান, গত ২৯ বছর এ অফিসে কাজ করি। কোন খারাপ রেকর্ড নাই। দিনে চার-পাঁচটা কাজ কোন বিষয় না। নতুন ডিডি সম্পর্কে এ দালাল সর্দার জানান, বর্তমান ডিডিও খুব ভালো।

সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোন ভাঙ্গা ও টাকা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য রেজাউল করিম খান বলেন, উনি আমার কাছে সহযোগিতা চাইছে। তাই সহযোগিতা করছি। টাকা নিয়ে ফেরত দিয়েছি। তিনি ভিডিও করে, ৯৯৯ নম্বরে কল দেয়। আমি বলছি, বন্ধ রাখেন। মোবাইল ফোন ভাঙ্গিনি।

এ বিষয়ে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা বলেন, মোবাইল ফোন ভাঙ্গার অভিযোগ পেয়েছি। বলছি মোবাইল পোনের দাম দিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি জয়েন করেছি গত মাসের শেষ সাপ্তাহ। কাজ শুরু করেছি মাত্র। অভিযোগে পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে সেবাগ্রহীতাকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়ে মারেন সাবেক ডিডি নুরুল হুদা। সেদিন ওই ঘটনার একটি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা আদালতের নজরে আসে। এ ঘটনায় গত ২৬ এপ্রিল কুমিল্লার ১ নম্বর আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্বাস উদ্দিন র‌্যাবকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। গতমাসের ১২ সেপ্টেম্বর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেই ডিডিকে বদলি করা হয়।

 

Leave a Reply