চাঁদপুরে পুলিশের সাথে দেখা হয়েছিল নিখোঁজ কয়েক তরুনের

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ সাত কলেজ ছাত্রের অন্তত কয়েকজন কুমিল্লা থেকে গিয়েছিলেন চাঁদপুরে; রাস্তায় বসে থাকতে দেখে পুলিশ তাদের তুলে দিয়েছিল এক হোটেলে।

পরদিন সকালে বাড়ি ফেরার কথা বলে ওই হোটেল ছাড়েন তারা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ, ‘জঙ্গিবাদে জড়িয়েই’ তারা লাপাত্তা হয়েছে।

১৬ দিনেও তাদের সন্ধান না মেলায় দিশেহারা অবস্থা তাদের পরিবারের সদস্যদের। সন্তানদের খোঁজে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন। র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরাও তাদের খোঁজে মাঠে নেমেছে।

অভিভাবকরা জানিয়েছেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল বুধবার কুমিল্লায় গিয়ে তাদের সঙ্গে চার ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। তারা যা যা জানেন, তা বলেছেন। কিন্তু তাদের ছেলেরা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, এটা তাদের বিশ্বাস হতে চাইছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যানাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “তারা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় একেক পরিবারকে একেক রকম কথা বলে গেছে। তাদের পরিবারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, তারাও জানেন না কোথায় গেছে ছেলেরা। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তারা জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ নাকি আল কায়েদার সদস্য হয়েছে- সেটা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করে বলা যাবে না। তাদের বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই সিটিটিসি কাজ করছে।”

সন্দেহের কেন্দ্রে এক তরুণ

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, এই সাত শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় পাঁচটি এবং ঢাকায় একটি জিডি হয়েছে।

এর মধ্যে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় অভিভাবকদের করা সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়েছে, গত ২৩ অগাস্ট বাসা থেকে বের হয়ে তারা আর ফেরেনি।

নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হলেন- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিল (১৭), একই কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ আস সামি (১৮), কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম (১৮), একই কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিহাল আবদুল্লাহ (১৭), ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯), একই কলেজের স্নাতক (সম্মান) ৩য় বর্ষের আমিনুল ইসলাম আলামিন (২৩) ও ঢাকা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করা সরতাজ ইসলাম ওরফে নিলয় (২৫)।

র‍্যাব ও পুলিশের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, এইচএসসি থেকে স্নাতক পড়ুয়া ওই তরুণরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে’ বাড়ি ছেড়েছে বলে গত কয়েক দিনের তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন।

এর আগে সিলেট অঞ্চল থেকেও বেশ কয়েক তরুণ ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে বাড়ি ছেড়েছিল বলে জানান ওই দুই কর্মকর্তা।

নিরুদ্দেশ হওয়া সাত শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জন কুমিল্লার হলেও একজন এসেছিলেন ঢাকা থেকে। রাজধানীর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সরতাজ ইসলাম নিলয় নিখোঁজ আরেক শিক্ষার্থী নিহাল আবদুল্লাহর খালাতো ভাই। কুমিল্লা নগরীর রানীরবাজারের পাশে অশোকতলা এলাকায় নিলয়ের খালা ফৌজিয়া ইয়াসমিনের বাসা।

নিলয় ওই তরুণদের মধ্যে বয়সে সবার বড়, যে কারণে তাকে ঘিরেই সন্দেহ নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোর।

নিহালের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, “নিলয় আমার ভায়রার ছেলে। গত ২৩ অগাস্ট সে আমাদের বাসায় আসার কথা বলে ঢাকার বাসা থেকে বের হয়। আমরা তাকে (নিলয়) খুবই ভালো ছেলে বলেই জানি।

“নিহাল আর নিলয় দুজনই ধর্মভীরু। ধর্মকর্ম করে, বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে বয়ান শোনে। কিন্তু নিলয় আমাদের বাসায় আসেনি।”

নিহাল বা নিলয় জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে- এমনটা এখনও বিশ্বাস করতে চান না সাইফুল। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তেই সব বেরিয়ে আসবে।

অন্য শিক্ষার্থীদের পরিবারও জানিয়েছে, নিহাল ও নিলয়ের মতো বাকি পাঁচজনও ধর্মভীরু; ধর্ম-কর্ম করার পাশাপাশি মসজিদে গিয়ে বয়ান শোনে তারা।

ওই পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পরিবারের সন্দেহ, নিলয়ই হয়ত বাকিদের নিয়ে গেছে। ঢাকা থেকে প্রায়ই কুমিল্লায় যাতায়াত ছিল নিলয়ের। নিজের বাসা থেকে ‘মিথ্যে বলে’ এসে নিলয়ই হয়ত বাকিদের নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে।

জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধার ও ঘটনার তদন্তে মাঠে কাজ করছে ঢাকা ও কুমিল্লার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল। আশা করছি, দ্রুত আমরা সব কিছু জানাতে পারব।

আর র‍্যাব-১১ সিপিসি ২, কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, “আমরা গত কয়েকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে খুবই তৎপর। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। বাকিটা পরবর্তীতে জানানো হবে।”

Leave a Reply