Site icon Doinik Bangla News

নির্বাচন নিয়ে কি জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার?

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল গতকাল কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং নীতিনির্ধারণের বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে বাইরের থাবা এসে পড়েছে। তারা থাবা বিস্তার করে রেখেছে। নির্বাচন নিয়ে দেশ সংকটে। বিশ্বাস- অবিশ্বাসের দোলাচলে আছে। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে, জনগণকে বাঁচাতে হলে, গার্মেন্টস বাঁচাতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হবে। কোনরকম কারচুপি আশ্রয় না যাবে না। পৃথিবীর দুই তিনটি দেশ ছাড়া আসলে কোন দেশই সার্বভৌম নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নির্দেশ দিতে পারে, আমরা সেভাবে পারি না। গতকাল সোমবার তিনি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন তদন্ত কমিটির সদস্যদের এক কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য রাখেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে যখন দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যাওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র বাছাই যাচাইয়ের কাজ চূড়ান্ত করে ফেলেছে, ঠিক সেই সময়েই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এই বক্তব্য উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই বক্তব্য রেখে কি বার্তা দিলেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বার্তা সুস্পষ্ট। তিনি তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনটি বার্তা দিয়েছেন। প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের সমস্ত গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। নির্বাচনে যদি কোন রকম কারচুপি হয় বা অনিয়ম হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেবে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার তথ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আছে বা পশ্চিমা দেশগুলো এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনকে ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে। যে কারণে তিনি এরকম মন্তব্য করেছেন।

দ্বিতীয়ত, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি আগাম সতর্কবার্তা দিলেন। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। কাজেই নির্বাচন যদি শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণমূলক না হয় তাহলে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হবে না এবং নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

তৃতীয়ত, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কি কি ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে সে ব্যাপারে একটি বার্তা দিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে ভিসা নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং গার্মেন্টসের ওপর নিষেধাজ্ঞা। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে নির্বাচনের আয়োজন করছেন তার একটি শর্ত সাপেক্ষ বিষয়। তিনি একটি কথা বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নির্দেশ দিতে পারে, আমরা সেভাবে পারি না। পৃথিবীর দু একটি দেশ ছাড়া আসলে কোন দেশই সার্বভৌম নয়। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেয় তাহলে পরে বাংলাদেশ যে সংকটে পড়তে যাচ্ছে এমন একটি মনোভাব সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন কাজী হাবিবুল আওয়াল।

প্রশ্ন উঠেছে যে, কাজী হাবিবুল আউয়াল এই বক্তব্যটি এই সময় কেন দিলেন? দেশ যখন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন এই বক্তব্যটি কেন দিলেন? এই বক্তব্য দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হতে পারে যে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ব্যাপারে আগাম সতর্ক করে দিলেন। তিনি জানিয়ে দিলেন যে নির্বাচনে কারচুপি হলে নির্বাচন কমিশন কি করবে না করবে সেটি পরের বিষয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড় দেবে না। কাজেই এই নির্বাচনের মূল রেফারি বা বিচারক নির্বাচন কমিশন নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের গ্রহণযোগ্যতার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আর এরকম একটি বার্তা দিয়ে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে আগাম সতর্ক করলেন।

তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা প্রধান নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের মতো করে হবে। এখানে বিদেশি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না এবং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। কাজেই নির্বাচনে কোন কারচুপি এবং জালিয়াতি ছাড়া যদি নির্বাচন হয় সেই নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়বে না।

Exit mobile version