ফালুকে নিয়ে সিঁথি-তারেকের দ্বন্দ্ব চরমে

 মোসাদ্দেক আলী ফালু, বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠজন। বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী থেকে শেষ পর্যন্ত হয়েছিলেন রাজনৈতিক সচিব। তার উত্থান রূপকথাকেও হার মানায়। গোরখাদক পরিবার থেকে অত্যন্ত হতদরিদ্র অবস্থায় বেড়ে ওঠা ফালু শেষ পর্যন্ত বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছিলেন। বাংলাদেশে তার ব্যাপক সম্পত্তির খবর পাওয়া যায়। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের খাতায় তিনি একজন পলাতক আসামি, বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই এখন জিয়া পরিবারের তুলকালাম শুরু হয়েছে। জিয়া পরিবারের সদস্যরা মনে করছেন বেগম খালেদা জিয়া বেনামী যে বিপুল সম্পত্তি রয়েছে সেই সম্পত্তির সিংহভাগই রয়েছে ফালুর হেফাজতে। আর বেগম খালেদা জিয়ার যদি শেষ পর্যন্ত কিছু হয় তাহলে এই সম্পত্তিগুলোর হিসাব থাকবে না এবং জিয়া পরিবার এই সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে। এরকম বিবেচনা থেকেই এখন তারেক জিয়ার প্রধান মিশন হয়েছে ফালুকে বশে আনা এবং ফালুর কাছ থেকে সবগুলো সম্পত্তির নিজের নামে নিয়ে নেওয়া। আর এ কারণেই বেগম খালেদা জিয়াকে চাপ দিচ্ছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এখনো মুখ খুলে বলেননি যে ফালুর কাছে তার কি পরিমান সম্পদ রয়েছে। তবে তারেক জিয়া এর অনেকটাই জানেন। আর এ কারণে সৌদি আরবে তিনি লোক পাঠিয়েছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন ফালুকে যেন নজরে রাখা হয় এবং ফালুর সম্পত্তির হিসেব-নিকেশও তিনি তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছেন এবং এই সম্পত্তিগুলো কোথায় কিভাবে আছে সে সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করছেন। কিন্তু ফালু এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি এবং বেগম খালেদা জিয়া তাকে আসলে কত সম্পত্তি দিয়েছিলো এবং বেগম খালেদা জিয়ার মাধ্যমে তিনি কত সম্পদ বানিয়েছেন সে সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করছেন না।
অন্যদিকে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে যখন তারেকের বিরোধ চরমে সেই সময় ফালুর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা সিঁথি। সিঁথি এখন ফালুর বিজনেস পার্টনার হয়েছে। অতি সম্প্রতি ফালুর একাধিক কোম্পানিতে সিঁথিকে পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবশ্য এই ঘটনাটি নতুন নয়। যখন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ফালু রাজনৈতিক সচিব থেকে এমপি হন তখন থেকেই আরাফাত রহমান কোকো ফালুর বিজনেস পার্টনার হিসেবে আবির্ভূত হন। সে সময় খালেদা জিয়ার সমস্ত অবৈধ অর্থ দুটি উৎস থেকে পরিচালিত হতো। একটি তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের মাধ্যমে, যেখানে তারেক জিয়ার পার্টনার ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। অন্যটি মোসাদ্দেক আলী ফালুর মাধ্যমে যেখানে ফালুর পার্টনার ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। তারেক জিয়া, হারিছ চৌধুরী এবং গিয়াসউদ্দিন আল মামুন গং যেমন দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি এবং লুটপাটের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতেন তেমনি মোসাদ্দেক আলী ফালুও বেগম খালেদা জিয়ার নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে কমিশন বাণিজ্য করতেন। আর এই কমিশন বাণিজ্য থেকে তিনি বিপুল অর্থের মালিক হয়েছিলেন। এই সম্পদগুলোকে সুরক্ষার জন্য বেগম জিয়া কোকোকে ফালুর সঙ্গে দিয়েছেন। কোকোর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তির মালিকানার কিছুটা সিঁথির কাছেও রয়েছে। কিন্তু তারেক জিয়া মনে করছেন যে, ফালুর যত সম্পত্তি সবই আসলে বেগম জিয়ার, ফালুর কিছু নেই। তবে ফালুর ঘনিষ্ঠরা এটা অস্বীকার করছেন। তারা বলছেন যে, ফালু পরিশ্রম করে এবং তার পদ-পদবী ব্যবহার করে এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, এর সঙ্গে খালেদা জিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। আর কোকোকে তিনি রেখেছিলেন কৃতজ্ঞতার চিহ্ন হিসেবে, এখন যে কৃতজ্ঞতার স্মারক হিসেবে কোকোর স্ত্রীকে রেখেছেন। কিন্তু বেগম জিয়ার যে বিপুল সম্পদ সে সম্পদ বেগম জিয়া মারা গেলে কি ফালু কুক্ষিগত করবে নাকি এই সম্পত্তি তারেক জিয়া পাবে, এ নিয়ে এখন তারেক-সিঁথির দ্বন্দ্ব তুমুল আকার ধারণ করেছে। বিএনপিতে এটি এখন টক অব দ্য টাউন।
সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার

Leave a Reply