Site icon Doinik Bangla News

বাংলাদেশে নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারঃ ভারত

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন দিল্লি সফরে এসেছেন। এখানে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ব্লিঙ্কেন সঙ্গে এসেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। এই দুই মন্ত্রী দিল্লিতে এসে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হচ্ছে। ‘টু প্লাস টু’ সামিটে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশ ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের অবস্থানের যে কোন পরিবর্তন হয়নি গতকালের ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য থেকে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয় ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে যে নীতি এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেই নীতি এবং পরিকল্পনার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমত হয় কিনা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের অবস্থান পরস্পর বিরোধী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। সোজাসাপটা কথায়, বিএনপি যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেটাই নিশ্চিত করতে চায়।আর। আর এই কারণেই তারা সরকারের ওপর নানা রকম ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। এখন যখন বিএনপি তার আত্মঘাতী আন্দোলনে ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে বিএনপির জ্বালাও পোড়াও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি আন্তর্জাতিকভাবে এখন ধিকৃত হচ্ছে এবং নিন্দিত হচ্ছে ঠিক সেই সময়ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। এই সংলাপের জন্য তিনি বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, যে নির্বাচনে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। অন্যদিকে ভারতের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশে নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। একটি দেশের নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল আসবে না আসবে সেটি সেই রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই। ভারত মনে করে যে, নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে সেটা তাদের বিষয়। দেখতে হবে একটি নির্বাচনে কতজন ভোটার উপস্থিত হচ্ছেন এবং ভোটাররা ঠিকমত ভোট দিতে পারছেন কিনা?

অবশ্য ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র দুটি দেশই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি ব্যাপারে একমত তা হল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর এরকম একটি অবস্থান থেকে ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুদিন ধরেই নমনীয় করার চেষ্টা করছে। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটন সফরে গিয়েছেন। তিনি সেখানে জো বাইডেনের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশ ইস্যুতে আলোচনা করেছেন। জি-২০ সম্মেলনে জো বাইডেন দিল্লি এলে সেখানেও বাংলাদেশ নিয়ে তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন। এই সমস্ত আলোচনাগুলো থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট ভারত বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়। এমন কোন সরকারকে ভারত ক্ষমতায় দেখতে চায় না যে সরকার দেশের সাম্প্রদায়িকতাকে লালন করবে এবং ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে। আর এটি ভারতের প্রধান লক্ষ্য।

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ভারতের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ভারতের বাইরে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কতটা শাসন করতে পারবে সে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ এই অঞ্চলে ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে হলেও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবে। ব্লিঙ্কেন-জয়শঙ্কর বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে কি রূপ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Exit mobile version