Site icon Doinik Bangla News

শুভ জন্মদিন হাসু আপা

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ
***
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর)।
ইতিহাসের পাতায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ক্ষণজন্মা কিংবদন্তি নায়ক স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় দাদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
পরিবারে শেখ হাসিনা হাসু নামেই পরিচিত ছিলেন। পিতা বঙ্গবন্ধু আদর করে হাসু নামেই ডাকতেন তাকে। শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায়। তারা পাঁচ ভাই-বোন। অপর চার জন হচ্ছেন—শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। ভাই-বোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন নেছাসহ সবাই ঘাতকদের হাতে নিহত হন।
***
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় তারা ওঠেন।
বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে (বর্তমানে শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়) ভর্তি করা হয়। পরে তিনি ভর্তি হন আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই তিনি ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গ্রেফতার করে। এ সময় হাসিনা তার বাবার সাথে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসাতেই ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম কালো দিনে বোন রেহানাসহ পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন হাসিনার স্বামী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া।
শেখ হাসিনার জ্যেষ্ঠ সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও ছোট সন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

***
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রধানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। ঢাকার তৎকালিন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) অধ্যয়নকালে তিনি কলেজছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। তিনি এ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন।
জন্মের পর থেকে দেখেছেন পিতা একজন রাজনৈতিক কর্মী।সেই সুবাদে কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ছয় দফা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। শত বাধা অতিক্রম করে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পিতার মৃত্যুর পর বহু যুদ্ধ করে দেশে ফিরে আসার পর ২১ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ১৯৯৬ সালে এ দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন।
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ওই বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। এরপর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয়ের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। তারপর আরও দুটি নির্বাচনে জনগণের মেন্ডেট পেয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা এ যাবতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াবার জায়গায় নিয়ে যান। গত ১৪ বছর ধরে শেখ মুজিব ও বেগম মুজিবের হাসু দৃঢ় চেতনায় দেশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন

***
তিনিই বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছেন। দেশকে এগিয়ে নিতে তাহার সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বেশ কিছু আইসিটি পার্ক, শতাধিক ইপিজেড নির্মাণের কাজ চলছে। বেশির ভাগ মহাসড়ককে ফোর লেন ও সিক্স লেনে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এর সফল বাস্তবায়ন শেখ হাসিনা সরকারের একটি বিস্ময়কর সাফল্য। এ ছাড়া রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ তার সরকারের গৃহীত দশটি মেগা প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পথে। এগুলো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এত যুগান্তকারী গতি আসবে। বিগত দুই বছর করোনার প্রভাবে যখন বিশ্বের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছিল, সেখানে শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্বকে অবাক করে বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২,২২৭ ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্থাপন করে বাংলাদেশকে প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের গৌরব এনে দিয়েছেন।

***

সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উল্লেখ করলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার জন্য এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু বদ্বীপে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’

দেশের শক্তিশালী অর্থনীতির কথা তুলে ধরে তিনি এ-ও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপির হিসাবে আমাদের অবস্থান ৪১তম। বিগত এক দশকে আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ২০.৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পূর্বে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর আগে, আমরা টানা তিন বছর ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। মহামারি চলাকালে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ হারে প্রসারিত হয়েছে।’

করোনা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ কীভাবে মৃত্যুহার কমিয়ে এনে দেশের সামাগ্রিক অর্থনীতিকে সমুন্নত রেখেছেন, সেই স্ট্র্যাটেজির কথাও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ করেছেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি শুরু থেকে এক সংকট মোকাবেলায় আমরা মূলত তিনটি বিষয়ের দিকে লক্ষ রেখে কৌশল নির্ধারণ করেছি। প্রথমত, মহামারি সংক্রমণ ও বিস্তার রোধ করতে আমরা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করেছি। দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে কৌশলগত আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছি এবং তৃতীয়ত, আমরা জনগণের জীবিকা সুরক্ষিত রেখেছি।’

***

এই দিনের প্রার্থণাঃ-শুভ জন্মদিন হাসু আপা। আল্লাহর নিকট আপনার সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ু প্রার্থনা করছি।

Exit mobile version