সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করলো জাতি

স্টাফ রিপোর্টঃ

“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,

ভয় নাই ওরে ভয় নাই।

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান,

ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ১২ টা ১ মিনিট.. রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ঢল নামে শোকার্ত মানুষের। একে একে আসতে থাকে রাজনৈতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। বিনম্র শ্রদ্ধায় মোমবাতির আলোয় স্মরণ করা হয় জাতির সূর্য সন্তানদের।
আজ শহীদ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে জাতি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে আসেন নানা শ্রেণি-পেশার হাজারও মানুষ।এর আগে, প্রথম প্রহরে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সব স্তরের মানুষ। বিনম্র চিত্তে স্মরণ করা হয় জাতির সূর্য সন্তানদের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবি সর্বস্তরের জনগণের।
শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা বলেন, বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেয়াই ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য। তবে, সময়ের পরিক্রমায় ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ। নির্মম হত্যাকাণ্ডের দোসরদের বিচারের পাশাপাশি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির দাবি নতুন প্রজন্মের।
বিজয়ের ৫০ বছরে শোক কে শক্তিতে পরিণত করার প্রত্যয় জানান শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাওয়া সবাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আয়োজনের মধ্যে বুদ্ধিজীবী দিবসটি উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের বিচারের কথা তুলে ধরে দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হত্যাকারীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে তাদেরও বিচার হবে।
তিনি বলেন, “২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভারে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছে। বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। এসব রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে। এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে।”
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়। তালিকা করে খুঁজে খুঁজে চালানো হয় কিলিং মিশন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা।
শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। রায়ের বাজারের মত আরো অনেক বধ্যভূমিতেই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
প্রায় অর্ধ শতক পর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির অংশ হিসেবে সরকার গত বছর প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২২২ জনের একটি তালিকা করে।

Leave a Reply