স্বপ্ন আজ বাস্তব; বিশ্ব মোড়লদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে “পদ্মা সেতু”; বিশ্ব প্রশংসায় ভাসছেন শেখ হাসিনা

রথীন্দ্র রায় সোহাগ,  স্টাফ রিপোর্টারঃ

২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২;  রফিক, সালাম, বরকত প্রমুখ,

২৬শে মার্চ ১৯৭১;              বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১;         ৩০ লক্ষ শহীদ,

২৫শে জুন ২০২২;              প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রথম তিনটি তারিখ বাঙালি জাতির কাছে অনেক অনেক পরিচিত,শেষ তারিখটি আগামী প্রজন্মের কাছে পরিচিত হয়ে থাকবে আজীবন। কারন,

এই দিনে উদ্ভোধন হয়েছিল বাঙালি জাতির স্বপ্নের পদ্মা  সেতুর। বিশ্ব মোড়লদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ও চরম অপমানের মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন  করেন”পদ্মা সেতু”।

এই সাহসী সিদ্ধান্তে অনেক বাধা – বিপত্তি ও দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। হিমালয়সম দৃঢ় ব্যাক্তিত্ত্ব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা তিনি,টলবেন না উনার এই সিদ্ধান্তে যে,” নিজস্ব অর্থায়নে হবে পদ্মা সেতু “।

বাস্তব করেছেন নিজ সিদ্ধান্ত, প্রশংসায় ভাসছেন দেশী-বিদেশী সকল গন মাধ্যম ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গত কারণেই প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। বিশ্ব দরবারে আলোচনা হচ্ছে তার নেতৃত্বগুণ। বন্ধু রাষ্ট্র ভারত তো বটেই পাকিস্তানের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনার সাহসিকতা নিয়ে মিডিয়ায় কলাম লিখছেন, অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

প্রশংসার মিছিলে যোগ দিয়েছে চীন, রাশিয়া ও সৌদি আরবও। ঢাকায় নিযুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা গত কয়েক দিনে আলাদা প্রতিক্রিয়ায় বলার চেষ্টা করেছেন- সফলভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ যে সাহস ও সংকল্প দেখিয়েছে, তাতে দেশটি সম্পর্কে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে।

বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার পরও দেশি অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে অসীম সাহসী বলে মন্তব্য করেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বিশ্বের সাধারণ কোনো নেতার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব হতো কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
গত রোববার (১৯ জুন) সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার সন্দেহ হয়, তিনি (শেখ হাসিনা) যা করেছেন এ ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত একটি দেশের সাধারণ কোনো নেতার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হতো কি না, আমি সন্দেহ করি। সত্যিই আমি সন্দেহ করি। ’

লি জিমিং বলেন, ‘বিদেশি কিছু উন্নয়ন অংশীদার বিশ্বাসই করতে পারেনি যে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরনের একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সব সন্দেহ, চাপ ও অভিযোগের মুখে নিজেকে ইস্পাত কঠিন দৃঢ় রেখে শতভাগ বাংলাদেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।’

তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের জন্য যেকোনো সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে দরকার ছিল অসীম সাহস এবং দৃঢ় রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ। এই সেতু সম্পর্কে ভাবতে গেলেই তিনটি শব্দ আমার মনে ভেসে ওঠে। তা হলো সাহস, সংকল্প এবং সমৃদ্ধি।’

লি জিমিং বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি স্বপ্ন থেকে সেতুটি আজ দৃঢ় বাস্তবে রূপ নিয়েছে এবং এখন থেকে কেউ সন্দেহ করতে পারবে না যে বাংলাদেশ পারে না।’

চীনের ‘মেজর ব্রিজ কনস্ট্রাকশন’ পদ্মা সেতু নির্মাণে সম্পৃক্ত হওয়ায় গর্ববোধ করে লি জিমিং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় সেতু, যা চীনা কোম্পানিগুলো দেশটির বাইরে তৈরি করেছে। সুতরাং আমি মনে করি, চীনের পক্ষেও এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা একটি সাহসী পদক্ষেপ ছিল।’

বিদেশি অর্থায়ন ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ বিশ্বকে কী বার্তা দিতে পেরেছে?— এমন প্রশ্নের জবাবে লি জিমিং বলেন, ‘এই শিক্ষাই পাওয়া গেছে যে বাংলাদেশের জনগণের ওপর আস্থা রাখা উচিত।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্প থেকে ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সরে দাঁড়ানোকে কোনো ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে দেখতে চাই না। এটি ছিল বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আস্থার অভাব, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আস্থার অভাব।’

চীনা নেতৃত্বাধীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই)’ সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, বহু দেশে বিআরআই সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।’

ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি সোমবার (২০ জুন) এক বিবৃতিতে বলেন, “পদ্মা সেতু হবে সত্যিকারের ‘গেম চেঞ্জার’। এটি আঞ্চলিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, সংযোগ, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এর সুফল পাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।”

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লক্ষ্যের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো বড় মাইলফলক অর্জন সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমাদের চোখের সামনেই বাস্তব রূপ নিচ্ছে।’

মান্টিটস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার কোম্পানি রোসাটমের সহায়তা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্য বড় প্রকল্পগুলোও বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় যোগ হচ্ছে। এগুলো বাংলাদেশের জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।’

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসংশা করে ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান সোমবার (২০ জুন) সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।’

অভিনন্দন বাঙালি জাতিকে তাদের আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ার জন্য। অভিনন্দন ও ভালোবাসা রইলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য।

 

 

Leave a Reply