৩০০ আসনে মনোনয়ন চুড়ান্ত করছে জামায়াত

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়েছে জামায়াত। কিন্তু তারপরও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জামায়াতে ইসলাম। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিনব এক কৌশল গ্রহণ করেছে এবং প্রথম দল হিসেবে জামায়াত নির্বাচনী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেছে। জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের জেলা আমীরদের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে মনোনয়ন বাছাই কমিটি গঠন করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই কমিটি জামায়াত কর্মীদের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করছে। এই ভোটে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২২টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জামায়াতের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা বিএনপির সঙ্গে আর নেই। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে ২০ দলীয় জোটের কার্যত অস্তিত্ব নেই। এই বক্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে গবেষণা করছে কিন্তু সারাদেশে জামায়াত এখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত। এই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে তারা নির্বাচনে মনোনয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করেছেন।
জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, জামায়াত এখন সর্বনিম্ন তৃণমূল পর্যন্ত অর্থাৎ ইউনিয়ন পর্যন্ত তাদের কমিটি বিস্তৃত করেছে। জামায়াতের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, অন্তত ৭০ ভাগ ইউনিয়নে তাদের কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে জামায়াত এখন দাওয়াত এবং বিভিন্ন ধরনের কর্মপন্থা অবলম্বন করে নতুন সদস্য সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্যেও জামায়াত পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। গত আগস্ট মাসে জামায়াত ৩০০ আসনের মনোনয়ন কার্যক্রম শুরু করেছে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ থেকে সাত সদস্যের এই কমিটি জামায়াতের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি করবে। এই তালিকা জামাতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার কাছে পাঠানো হয় এবং মজলিশে শুরা এই তালিকাগুলো যাচাই-বাছাই করার পর একটি সম্ভাব্য প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা পাঠাচ্ছে জেলা কমিটির কাছে। জেলা কমিটি ওই তালিকাটি নিয়ে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কে প্রার্থী হতে পারে তা চূড়ান্ত করেছে। যিনি প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হচ্ছেন তিনি মাঠে কাজ শুরু করেছেন।

জামায়াতের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ৩০০ আসনে জামায়াত প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বলে আশা প্রকাশ করছে। এই ৩০০ আসনেই যে তারা শেষ পর্যন্ত প্রার্থী দিবে এমনটি নয়। জামায়াতের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, সমমনা ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু করেছে। প্রয়োজনে তার জামায়াত সমমনা ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট গঠন করতে পারবে। তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, জামায়াত এখন তার রাজনৈতিক কৌশলের দুটি ধারা অব্যাহত রেখেছে। একটি ধারা হলো শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে তারা আবার বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষি করবে এবং যেহেতু তাদের কাছে ৩০০ আসনের প্রার্থী রয়েছে, কাজেই জামায়াত এবার গতবারের চেয়ে বেশি আসন পাবে। জামায়াতের দ্বিতীয় কৌশল হলো, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তারা অন্যান্য ইসলামপছন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠন করবে এবং সেই জোটের মাধ্যমে তারা নির্বাচন করবে। ইসলামপছন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাদের সাথে জামায়াত এখন কথাবার্তা বলছে তাদের অন্তত তিনটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আছে এবং দলীয় প্রতীক রয়েছে। শেষ পর্যন্ত হয়তো জামাত সেই প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, জামায়াত যদি ভিন্ন নামেও নিবন্ধনের আবেদন করে তবুও তাকে নিবন্ধন দেয়া হবে না। এরকম বাস্তবতায় জামায়াত সারাদেশে স্বতন্ত্র নির্বাচনও করতে পারে। জামায়াতের অভ্যন্তরীণ এক বুলেটিনে বলা হয়েছে যে, আগামী নির্বাচন করতেই হবে। নির্বাচনের মাধ্যমেই সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এ কারণেই আগামী নির্বাচনে যে জামায়াত অংশগ্রহণ করছে তা মোটামুটি নিশ্চিত।

Leave a Reply