কুমিল্লায় দিন দিন বাড়ছে কিশোর গ্যাং এর দৌড়াত্ব!

ক্রাইম রিপোর্টঃ কুমিল্লা নগরীতে কিশোর গ্যাং এর দৌড়াত্ব ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড  দিন দিন বাড়ছে। খুন, ছিনতাই, অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি, ইভটিজিংয়ের মত নানান অপরাধ জনক কর্মকাণ্ডে কিশোর বয়সীরা  জড়িয়ে পড়ছে। অভিভাবকের অজান্তে সন্তানরা  জড়িয়ে পড়ছে অন্ধকার জগতে । যে বয়সে এসব কিশোররা পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা কিংবা সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়ানোর কথা সে বয়সে কুমিল্লার অন্তত দুই হাজারের বেশি কিশোর-যুবক জড়িয়ে পড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সাথে। ১২ থেকে ২৫ বছর বয়সী এসব ছেলেরা অনেকেই ঝরে পড়ছে স্কুল-কলেজ থেকেও। মাদকাসক্তিতেও জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। আবার অনেকে মোবাইল আসক্তির কারনে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধী গ্রুপের সাথে।   কিশোর গ্যং উৎখাতে কুমিল্লার নব নিযুক্ত পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, আমি কুমিল্লা এসেই শাহাদাত হত্যাকাণ্ডের কথা শুনেছি। আমি পুলিশের সকল অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখতে। কিশোর অপরাধ সামাজিক ব্যাধি। তা প্রশ্রয় দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। এই অপরাধ রোধ করতে হলে- সচেতনতা তৈরী করতে হবে। আর পুলিশিং এর যত কঠোরতার প্রয়োজন তা করা হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা শহরে আধিপত্য বিস্তার করে সক্রিয় আছে ছোট বড় অন্তত ২০টি কিশোর গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত ‘ঈগল গ্যাং’। এটির সদস্য ৯ শতাধিক। অন্যান্য গ্যাংগুলো হলো- রয়েল বেঙ্গল, সিজলিং, জে অ্যান্ড জে, বিগ ব্রাদার, টুইস্ট, ব্ল্যাক স্টার, ডার্ক, ঈগল, আরজিএস, রেক্স, এক্স, এলআরএন, সিএমসি, মডার্ন, রক স্টার, ডিস্কো বয়েজ, বস প্রভৃতি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক দল ভিত্তিকও কিছু গ্যাং তৈরী হচ্ছে। যারা নিজেদের জায়গা গুলোতে আধিপত্য বিস্তারের নামে জড়িয়ে গেছে নানান অপরাধে।
কুমিল্লা শহরের নগর উদ্যানের আশপাশে, ফৌজদারি মোড়, মোগলটুলী, তালপুকুরপাড়, ঠাকুরপাড়া, মদিনা মসজিদ সড়ক, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ এলাকা, চর্থা থিরাপুকুরপাড়, অশোকতলা, শহরতলীর ধর্মপুর, চাঁনপুর, বাখরাবাদ, কান্দিরপাড়, পুলিশ লাইন্স এলাকা, শাসনগাছা, নোয়াপাড়া চৌমুহনী, পুরাতন চৌয়ারা এলাকায় নিয়মিত শো-ডাউন করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
এদিকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের বিভিন্ন শাখা থেকে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে দুই বছরে এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাতে খুন হন শিক্ষার্থীসহ অন্তত আট জন। গত ৪ মে টিকটক গ্রুপের মধ্যে বিরোধের জেরে শুভ নামের কিশোরকে বুকে ও পেটে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। কুমিল্লা শহরতলীর গোমতী নদীর পালপাড়া ব্রিজ এলাকায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও নগরীর মোগলটুলী এলাকার শিক্ষার্থী আজনাইন আদিল, মডার্ন স্কুলের ছাত্র মুমতাহিন হাসান মিরন, অটোরিকশাচালক শাহজাহান, নগরীর দিশাবন্দ এলাকার শিক্ষার্থী সাজ্জাতুল ইসলাম অনিক, কুমিল্লা অজিত গুহ কলেজের ছাত্র অন্তু, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র শাহজাদা ইসলামসহ বেশকিছু কিশোর ও শিক্ষার্থী এসব গ্যাংয়ের বলি হন।

Leave a Reply