মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের উদ্ধেগের জায়গায় নেই বাংলাদেশের নাম

বাংলা নিউজ অনলাইন ডেস্কঃ  সদ্য বাংলাদেশ সফরকারী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচেলেটের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী জাতিসংঘের দৃষ্টিতে মানবাধিকার বা অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন উদ্বেগ প্রকাশিত হয়নি। যে সকল দেশ ও অঞ্চলে মানবাধিকার ও মানবিক অধিকার নিয়ে সমস্যা ও উদ্বেগ রয়েছে, সেটি জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান মিশেলের গতকালের রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। সেই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নেই।

জাতিসংঘের এই রিপোর্টে গুম- খুনের মতো বিশেষ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা যে সকল দেশে বিরাজমান, সে বিষয়টিও উল্লেখিত হয়েছে। এই সকল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম আসেনি। মিশেলের রিপোর্টে বরং রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক মানবাধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে প্রকারন্তরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসকল ক্ষেত্রে নানা যুগান্তকারী অর্জনকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার টিমের বাংলাদেশ সফরকালে সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মানবাধিকার বিষয়ে যে সকল তথ্য উপাত্ত দেয়া হয়েছিল, সেগুলো তারা গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়েছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই রিপোর্টে সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

আগামী ৩১ আগস্ট মিশেলের জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান হিসেবে চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। এই উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার গতকাল প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে  এই রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তাঁর এই রিপোর্টে মূলত জাতিসংঘের দৃষ্টিতে এই চার বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির একটা মূল্যায়ন ফুঁটে উঠেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ সহ যেসকল দেশে মিশেল সফর করেছেন, তাঁর একটা তালিকা উল্লেখ করেছেন। দেশ গুলো হলো বার্কিনা ফাসো, নাইজার, আফগানিস্তান, চীন, বসনিয়া এন্ড হার্জেগোভিনা, পেরু এবং বাংলাদেশ।

মিশেল তাঁর রিপোর্টে উল্লেখ করেন, তাঁর এই মেয়াদকালে পৃথিবীর মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে । বৈশ্বিক কোভিড মহামারীর অপরিসীম নেতিবাচক প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ইউক্রনে যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর দেশে দেশে তীব্র খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট – এই তিনটিই হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের প্রধান তিন ইস্যু ।

তাঁর রিপোর্টে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ড প্রথা বাতিল করার ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ, অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতার তথ্য উঠে আসে । কোন কোন দেশে কী কী অগ্রগতি হয়েছে, সেকথাও এসেছে এই রিপোর্টে ।

নিজের দেশে দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি উল্লেখ করেন রাষ্ট্র পরিচালনা অনেক কঠিন কাজ । রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সবসময়ই নানা দাবী, সংকট ও সমস্যা থাকে । রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সকল সংকটই অতিক্রম করা যায় ।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মানবাধিকার সম্পর্কিত এডভোকেসি অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল আনে।দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলোম্বিয়ায় একটি মানবাধিকার কেন্দ্রিক ড্রাগ পলিসি কীভাবে সেখানকার চলমান সামাজিক- রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে, সে বিষয়টি তুলে ধরা হয় ।

মিশেল তাঁর চার বছরের মেয়াদকালে যে সকল দেশে গিয়েছেন, যে সকল মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার লংঘনের ভিকটিম দের সাথে কথা বলেছেন, সে বিষযে একটি সার সংক্ষেপ প্রকাশ করেন । রিপোর্টে আফগানিস্তানের নারী  মানবাধিকার কর্মীদের সাহসের প্রশংসা করা হয় । মেক্সিকোর হারিয়ে যাওয়া মানুষদের মায়েদের শক্ত মনোবলের কথা বলা হয় ।  রিপাবলিক অফ কঙ্গোর যৌন নিপীড়ণের শিকার নারীদের কথা বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবৈধ মাইনিং এর কারণে নানা ঝুঁকিতে থাকা পেরুর আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলা হয়। আফ্রিকার বারকিনা ফাসো তে আভ্যন্তরীন বসতিহারা (ইন্টারনালী ডিসপ্লেসড) মানুষদের কথা উল্লেখ করা হয়। নাইজারের গ্রামাঞ্চলে মানবাধিকার রক্ষায় কমিউনিটি লিডারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়। ভেনিজুয়েলায় ২০১৭ সালে প্রতিবাদ সমাবেশে এক তরুণের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বসনিয়া এন্ড হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিসসা শহরে ২৭ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া এক ছেলের কথা উঠে আসে এই রিপোর্টে।

রিপোর্টে উত্তর ইউথোপিয়ায় ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের কথা তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘ ইয়েমেন, সিরিয়া, আফ্রিকার সাহেল এলাকা এবং হাইতি তে মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

রিপোর্টে বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কথা বিশদভাবে উঠে আসে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে এক রোহিঙ্গা শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানতে পারেন তার স্বপ্ন ভঙ্গের কথা। রোহিঙ্গা হওয়ার কারণে তাকে নিজের দেশ ছাড়তে হলো।

মিয়ানমারে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও মানবিক বিপর্যয়ের ফলে প্রায় এগারো লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। রিপোর্টে মিয়ানমারে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘন ও মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে দায়ী করা হয়। রিপোর্টে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে মানবতা বিরোধী অপরাধ বন্ধের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের উপর  চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানানো হয়।

রিপোর্টে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে সেটি উল্লেখ করা হয়। ইউক্রেনের উপর সশস্র আক্রমণ বন্ধের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অনুরোধ করা হয়। রিপোর্টে উভয় পক্ষ কে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের নীতি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়।

 

Leave a Reply