

শাহাদাত কামাল শাকিল।। ::ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ করেই বিপজ্জনকভাবে হু হু করে বাড়ছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। এতে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৪ লাখ ১৬ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছেন।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল সোয়া ৫ টায় গোমতী নদীর পানি ৮ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটারে পৌঁছায়, যা এখনো বিপদসীমার প্রায় আড়াই মিটার নিচে থাকলেও পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গোমতী নদীর বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া, টিক্কার চর, চানপুর ব্রিজ ও সংরাইশ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নদীর তীরবর্তী কিছু চরাঞ্চল ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় বুড়বুড়িয়া বাঁধ ভেঙে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার বহু ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। তারা আশঙ্কা করছেন, এবারের পানি বৃদ্ধিও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। যদি পানি আরও বাড়ে, তবে পাড়ের মানুষকে আবারও ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হতে পারে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গোমতীর পানি প্রায় ৫ মিটার বেড়েছে। পাউবো কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান বলেন, “বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে ও উজানের ঢল কমলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি।”
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত) ১২৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, “সাগরে একটি লঘুচাপ রয়েছে, যা ভারতের অংশে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগে আরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।”
গোমতীর পানি বৃদ্ধি এবং টানা বৃষ্টির প্রভাবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, “৫৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও জিআর চাল মজুত আছে। প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বুড়িচং উপজেলার ইউএনও তানভীর হোসেন বলেন, “গোমতীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচে থাকলেও মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। এলাকাভিত্তিক মাইকিং ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বিত প্রস্তুতি চলছে।”
অতিবর্ষণ ও উজানের পানিতে বন্যার আশঙ্কা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। যদিও এখনো গোমতীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি, তবুও সম্ভাব্য দুর্যোগের জন্য জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একযোগে প্রস্তুত রয়েছে।