বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল জাতিকে পঙ্গু করার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র – হাজী ইয়াছিন

কুমিল্লায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ও বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় আলোচনা সভা ও দোয়া। 

কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আপনারা জানেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শুধু কথায় নয়—তিনি নিজ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। সেদিন পুরো বাঙালি জাতি পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এক পর্যায়ে দখলদার বাহিনী বুঝতে পেরেছিল, এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষা আর দমিয়ে রাখা যাবে না, এই দেশে তাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তখনই তারা নীলনকশা অনুযায়ী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়—এ দেশের মেধাবী মানুষদের নির্মূল করার জন্য।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ও বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় আলোচনা সভা ও দোয়ার অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একটি জাতিকে পঙ্গু করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো তার মেধাকে ধ্বংস করা। একটি জাতির উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সুন্দরভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মেধা ও যোগ্য নেতৃত্ব। সেই উপলব্ধি থেকেই পরিকল্পিতভাবে জহির রায়হান থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সাংবাদিকসহ অসংখ্য মেধাবী মানুষকে ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছিল। এত বড় ক্ষতির পরও বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে—এটাই এই জাতির শক্তি ও সম্ভাবনার প্রমাণ।
হাজী ইয়াছিন আরও বলেন, গত ১৭ বছরে এ জাতির ওপর চালানো হয়েছে অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন, লুটপাট, মিথ্যা মামলা, হামলা ও দুর্নীতি। অর্থনীতিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, বিরোধী মত ও কণ্ঠকে চেপে ধরা হয়েছিল। দেশবাসীর সম্পদ লুণ্ঠন করা হয়েছে। যদি এই সময়টুকু দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনায় কাজে লাগানো হতো, তাহলে আজ বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত।

ছবিঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন

 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজ আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো—১৭ বছর ধরে মানুষ যে দুঃখ, বেদনা ও বঞ্চনা সহ্য করেছে, সেই ক্ষত মুছে দিয়ে সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনা করা। মানুষ আজ নতুন স্বপ্ন দেখছে—আগামী দিনের একটি সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। আমাদের পক্ষে সম্ভব এবং আমরাই পারব একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। তবে সেটি প্রমাণ করতে হবে আমাদের কথা দিয়ে নয়, আমাদের কর্মের মাধ্যমে—এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে।
নতুন প্রজন্মের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকের তরুণ প্রজন্ম তোষামোদ, ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার রাজনীতি পছন্দ করে না। গত ১৭ বছর ধরে তারা মিথ্যা রাজনীতির বুলি শুনে ক্লান্ত। তারা আর ফাঁকা আশ্বাস শুনতে চায় না। তারা চায় সৎ, যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্ব। তারা বিশ্বাস করে—রাজনীতি কোনো ব্যবসা নয়, রাজনীতি হতে হবে জনসেবা ও মানুষের কল্যাণের মাধ্যম। আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার মতো নেতৃত্বের দিকেই নতুন প্রজন্ম তাকিয়ে আছে।
সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এ বারী সেলিম এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক শফিউল আলম রায়হান, জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সৈয়দ মেরাজ, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক ধীমানসহ অন্যরা।
এছাড়া আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল্লাহ রতন, মাহাবুবুর রহমান দুলাল, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য মনির হোসেন পারভেজ, আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম চেয়ারম্যান, মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রুমান হাসান, জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বিপ্লব, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান সাঈদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব এ কে এম শাহেদ পান্না, মহানগর কৃষকদলের আহ্বায়ক কাজী শাহিনুর, সদস্য সচিব ইকরাম হোসেন তাজ, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন। এছাড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী জোবায়ের আলম জিলানী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন রবিন, মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেনসহ অন্যরা।
আলোচনা সভায় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও কৃষকদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সভা শেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply