যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে লাকসামে পালিত হলো মহান বিজয় দিবস

লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লার লাকসাম উপজেলাতেও যথাযোগ্য মর্যাদা, গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে বিজয় দিবস ২০২৫। দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের স্মৃতি ও চেতনা নতুন করে উদ্ভাসিত হয়।

১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের প্রথম প্রহরে ভোর ৬টা ৩৪ মিনিটে ৩৪ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির সূচনা হয়। তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের কথা স্মরণ করা হয়।

এরপর লাকসাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নার্গিস সুলতানা। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিলন চাকমা, উপজেলা কৃষি অফিসার আল আমিন, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার উপন্যাস বিশ্বাসসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এর পর লাকসাম বধ্যভূমিত শহীদ স্মৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন লাকসাম উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

এছাড়াও লাকসাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,  লাকসাম থানা পুলিশ, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সকাল ০৮ঃ৩০ মিনিটের দিকে বিজয় দিবসের দ্বিতীয় পর্বের কর্মসূচি শুরু হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য জাতীয় প্যারেড। প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন লাকসাম থানা পুলিশের একটি চৌকস দল, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি সদস্য, বিএনসিসি ক্যাডেট, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নার্গিস সুলতানা।

দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরতে এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে লাকসামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আলোচনা সভা, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা করেন এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়।

দুপুরের দিকে বিজয় দিবসের আনন্দ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ খেলায় দর্শকদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি আয়োজন করা হয় বিজয় মেলা, যেখানে উপজেলা মৎস্য স্টল, প্রাণী সম্পদ স্টল, কৃষি স্টল,নারী উদ্যোক্তা ফুড ও কেকের স্টল, গ্রামীণ পণ্য, শিশুদের খেলাধুলা ও নানা বিনোদনমূলক আয়োজন স্থান পায়।

সার্বিকভাবে দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও বিজয়ের আনন্দে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে লাকসাম। যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত এ বিজয় দিবস লাকসামের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে দেশপ্রেম ও ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেয়।

Leave a Reply