গোমতী নদীর ভেতর অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে রিসোর্ট বাণিজ্য! কর্তৃপক্ষ নীরব

মোহাম্মদ জিল্লুর কামাল:  নদীখেকোদের চোখ পড়েছে এবার অন্যদিকে। এতোদিন নদীর বুক চিড়ে বালু মাটি উঠানোর পাশাপাশি এখন চলছে নদী দখল করে তার বুকে পাকা স্থাপনা নির্মাণ কাজ। আইনের তোয়াক্কা না করে চলছে দখলদারিত্ব। নদীর বিভিন্ন স্থানে কমবেশি ১০ টি রিসোর্ট তৈরি হয়েছে। জানা যায়, গোমতী নদীর নাব্যতা হারিয়ে এক সময় মূল গোমতী নদীটিও পুরাতন গোমতী নদীর মতো অবস্থা হয়ে যাবে। এ দিকে অনেক ঝুঁকিতে রয়েছে গোমতী নদীর উপড় নির্মিত কয়েকটি ব্রীজ। অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করায় পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। অন্যদিকে চলছে ভবন নির্মান করে রিসোর্ট তৈরির উৎসব। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর কোল ঘেষে আদর্শ সদরের জগন্নাথপুরে নদীর ভেতরে গড়ে উঠেছে গোমতী বিলাশ নামের রিসোর্ট ও কফি হাউজ। এখানে নদীর ভেতরে পাকা স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কর্তৃপক্ষ। বরং খারাপ ব্যবহার করেন। এছাড়া পালপাড়ায় ততোধিক পাকা স্থাপনা করে রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে। গোমতী কফি হাউজ সর্ব প্রথম নদীর ভেতরে রিসোর্ট তৈরি করে। তারপর পাশে আরেকটি তৈরি হয়। ময়নামতি, আসাদনগরেও রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে। গোমতী নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৫ মিটার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটির ধ্বংসাত্মক প্রবণতা প্রতিরোধে এবং কুমিল্লা শহর রক্ষায় বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বন্যা প্রতিরোধের জন্য ভেড়িবাঁধ এবং নদীর গতিপথ সোজা রাখতে ১৯টি লুপকাট নির্মাণ করেছে। এসকল ব্যবস্থা গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় বন্যার প্রকোপে কুমিল্লা শহর বিপদাপন্ন হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গৃহীত আরও কিছুসংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়নের পর, বর্তমানে গোমতী নদীর দৃশ্যত নিয়ন্ত্রণাধীন। নদীর প্লাবন ভূমি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে লিজ বা সাব-লিজ দেয়া হলে, নদ-নদীর জরিপ, পর্চা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়া হলে, ডুবো চরকে চরে রূপান্তরের চেষ্টা, পানি প্রবাহে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ক্ষতিসাধন ইত্যাদি করার চেষ্টা করা হলে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে। নদী রক্ষার সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, অন্য আইনে যা কিছুই বলা হোক না কেন, নদীর দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, মৎস্য চাষ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। সরকারি কোন কর্মকর্তাও যদি নদ-নদীর জায়গা, তীরভূমি ইত্যাদি অবৈধভাবে কারো নামে বরাদ্দ করেন, তারাও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে দোষী হবে। নদী রক্ষা কমিশনের ১২ নং ধারায় যে কোন কার্যাবলি সম্পাদন করিবে, যথাঃ— (খ) নদী অবৈধ দখলমুক্ত এবং পুনঃদখল রোধ করার বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ প্রদান করা; (গ) নদী এবং নদীর তীরে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত সরকারকে সুপারিশ প্রদান করা; (ঘ) নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখার বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ প্রদান করা। নদীর বেড়িবাঁধের ভেতরে ইট সিমেন্টের পাকা স্থাপনা নির্মাণকে নদী হত্যার শামিল বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। তাই দ্রুত নদী রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর, নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

Leave a Reply