বাংলাদেশ সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে

বৈশ্বিক অর্থনীতে মন্দার চাপ থাকলেও বাংলাদেশের তা মোকাবেলার সক্ষমতা রয়েছে। রফতানি ও রেমিট্যান্সে ভালো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের আগাম সতর্কতার পাশাপাশি নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সীমাবদ্ধতা থাকলেও করোনা মহামরীকালের মতো এবারও বাংলাদেশ সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।

শনিবার সকালে রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের আয়োজনে ‘বিশ্বমন্দার চ্যালেঞ্জ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। সদ্য প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক তোয়াব খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বৈঠকের সূচনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু।

গোলটেবিল বৈঠকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, গত বছর রেমিটেন্স কমলেও এই বছর এই কোয়ার্টারে বেড়েছে। মাসে দুই বিলিয়ন ডলার হারে রেমিটেন্স বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে আমরা ২৪ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার বেশি পাবো।

তিনি আরও বলেন, রেমিটেন্স যোদ্ধা বাড়তে থাকায় এটি অব্যাহত থাকবে। রফতানির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ইতিবাচক দিক আছে। ডলার ম্যানেজমেন্টের জন্য আমদানি কমানোয় ভালো ফল দিচ্ছে। সম্প্রতি রফতানি বাড়ছে, আমদানি কমছে। এফডিআই বেড়েছে, এলসি ওপেন কমেছে।

সাবেক মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং ইউরোপের ক্লাইমেট সংকটসহ নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের মন্দা দেখা দিয়েছে।

সাবেক মূখ্য সচিব আরও বলেন, স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মন্দা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যাতে সবাই তা মোকাবিলায় মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন।

সম্প্রতি দেশে বিদ্যুৎ সংকট প্রবল হয়েছে। এই সংকট সমাধানে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সোলারে যেতে পারলে অনেকখানি কমফোর্টেবল সিচুয়েশন হতো। কয়লার বদলে সোলারে যেতে পারলে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে বেশ অগ্রগতি হবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার বলেন, মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি ও খাদ্যের দামবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিকভাবে ডলারের মান বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে।

বৈশ্বিক এসব কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভারসাম্যে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারেন্ট একাউন্ট ডিপিসিট, ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখতে গিয়ে রিজার্ভে সমস্যা হলেও এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট এবং রেমিট্যান্সে ভালো ইঙ্গিত মিলছে। এটা একটা সুখবর।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বমন্দার যে প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দেখছি, তা প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। করোনার সময় বিশ্বের অবস্থা খারাপ থাকলেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে একটি ইতিবাচক ধারা ছিল। এখন উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে না পারলেও প্রবৃদ্ধির ধারাটা ধরে রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সময় দেয়া ডলারের কারণে ইনফ্লেশন (মুদ্রাস্ফীতি) হয়েছে। এ কারণে তারা এবং তাদের মিত্ররা পলিসি নিয়ে এগোচ্ছে। তাতে ইনফ্লেশন বেড়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে আমাদের শ্রমবাজার বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির ধারাটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসের সাবেক মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ এবং ভূতত্ত্ব ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম।

বৈঠকটি সরাসরি সম্প্রচার করে দেশের প্রথম এইচডি বেসরকারি চ্যানেল একাত্তর টেলিভিশন।

Leave a Reply