বিএনপিকে তাদের জালাও পোড়াও কর্মসূচি বন্ধের পরামর্শ কূটনীতিকদের

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ বিএনপি দুই দিনের অবরোধের পর আগামীকাল বিরতি দিয়ে আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে। বুধ এবং বৃহস্পতিবার এই অবরোধ কর্মসূচি হবে। অবরোধের একমাত্র বিষয় হল কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা ও গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া। বিশেষ করে সন্ধ্যা বেলায় গুপ্ত হামলার মতো করে এ ধরনের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিমা কূটনীতিকরা এই ঘটনায় অত্যন্ত বিরক্ত বিব্রত বটে। তারা মনে করছে যে, বিএনপির এই হঠকারী আন্দোলন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি যেমন ব্যাহত করছে, তেমনই সরকারের হাতে অনেকগুলো সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে। সরকার এখন তার মতো করে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার যৌক্তিক কারণ দাঁড় করাতে পারছে এবং আন্তর্জাতিক মহলও সরকারকে কোনও চাপে ফেলতে পারছে না। আর একারণেই অন্তত পাঁচটি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপিকে তাদের কর্মসূচি বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে। বরং এই ধরনের অবরোধের কর্মসূচির পরিবর্তে তারা যদি প্রতিবাদ সমাবেশ বা শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করে তাহলে পরে তাদের জন্য ইতিবাচক হবে। এ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে থাকলে বিএনপির প্রতি কোন ধরনের সহানুভূতি দেখানো সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন দেশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা যোগাযোগ করছেন এবং তারা এই ধরনের হিংসাত্মক জ্বালাও পোড়াওয়ের কর্মসূচি অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে নিরীহ মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ানো, বাসে আগুন লাগানো, গুপ্ত হামলা ইত্যাদি কখনোই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হতে পারে না বলেই এসব দেশ মনে করে। আর এই কারণেই বিএনপিকে তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এবং মতপ্রকাশের পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান অবশ্য বলেছেন যে সরকার তাদেরকে বাধ্য করেছে এই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণের। এছাড়া তাদের কাছে কোন বিকল্প নেই। বিএনপির ওই নেতা কূটনীতিকদের বলেছেন যে তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই করছিলেন। কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারই হামলা চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এখন তারা বাধ্য হয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। তবে কূটনৈতিক মহল মনে করেন যে বাধ্য হয়ে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করার কোন যৌক্তিকতা নেই এবং বিশেষ করে যে আগুন সন্ত্রাস গুলো হচ্ছে তার দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে বিএনপির ওপর বর্তাচ্ছে। এর ফলে বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন হবে না— এমন একটি অবস্থানের যৌক্তিক পটভূমি পাল্টে যাচ্ছে বলেও কূটনীতিকরা মনে করেন।

তারা মনে করেন যে এ রকম চলতে থাকলে বিএনপি ছাড়াই যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে তাহলে সেই নির্বাচনের বিরোধিতা করার কোন কারণ থাকবে না। বরং বিএনপিকে অবিলম্বে এই সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন বা অবস্থান কর্মসূচির মতো কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমন কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য তাদেরকে বলা হচ্ছে যে কর্মসূচিতে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে না এবং জনগণের জানমাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে না। এ ধরনের কর্মসূচি যদি বিএনপি ঘোষণা না করতে পারে তাহলে বিএনপির ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর পরামর্শে বিএনপি এখন কর্মসূচি বন্ধ করে দেবে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। বরং ড. খান মনে করছেন যে বিদেশিরা যাই বলুক না কেন, তাদের অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে এবং সামনের দিনগুলোতে তারা টানা কর্মসূচির কথাও ভাবছে।

Leave a Reply