বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলায়‘সব ধরনের’ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে আ.লীগ

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ ‘সব ধরনের প্রস্তুতি’ নিয়েই আজ মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। দুই লক্ষাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে রাজধানীতে বড় শোডাউনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছে দলটি। পাশাপাশি ঢাকার রাজপথ দখলে রাখতে ভোর থেকেই প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে কঠোর ও সতর্ক অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীনরা।

মাঠে থাকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সতর্ক পাহারায় থাকবে তারা। পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে ও সড়কে প্যান্ডেল টাঙিয়ে সকাল থেকে অবস্থান নেবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। দলীয় সংসদ-সদস্য ও কাউন্সিলররাও তাদের অনুসারীদের নিয়ে মাঠে থাকবেন।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও শাহবাগে অবস্থান নেবে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। উত্তরা, যাত্রবাড়ী, মিরপুরসহ ঢাকার প্রবেশপথগুলোতেও সতর্ক অবস্থান থাকবে সকাল থেকেই। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে আলাদা দৃষ্টি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ রাজধানী ঢাকা পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।

বিএনপি বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে- এমন শঙ্কা থেকেই সব প্রস্তুতি রাখছে ক্ষমতাসীনরা। ফলে নিজেরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ঘোষণা দিলেও প্রয়োজনে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতিও রাখছে ক্ষমতাসীনরা। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে দলটির নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি সব দিক থেকেই আছে। আমাদের সমাবেশে ব্যাপক আকারে লোক সংখ্যা উপস্থিত হবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সমাবেশ শেষ করব। আমরা অশান্তি চাই না। তিনি আরও বলেন, কিন্তু কেউ যদি অশান্তি করতে চায়, যদি ঢাকা শহরে সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে তার খেসারতও তাদের দিতে হবে।

এদিকে স্থান নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজকে রাতে পল্টন থানা থেকে অনুমতি পত্রের চিঠি দেওয়া হয়।

রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ যুগান্তরকে জানান, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ২টায় শুরু হওয়া এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং সঞ্চালনা করবেন দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির।

এদিকে বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করবেন। দুপুরের আগে সমাবেস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাবে বলে ধারণা আয়োজকদের।

এদিকে আজকের সমাবেশে নেতাকর্মীদের ব্যানার না নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তবে এর আগে নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছিলেন, ২৮ তারিখে নৌকার পেছনে মোটা মোটা লাঠি নিয়ে যেতে হবে। ফেস্টুনে মোটা মোটা লাঠি থাকবে। মূলত আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি কোনো ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করার পরিকল্পনাও আছে দলটির।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে নেতাকর্মীর ভিড় : আজকের মহাসমাবেশ সামনে রেখে বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও দিনভর মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডে মিছিল-সমাবেশ করেছে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। এ সময় অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ছোট মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীদের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন।

এরপর সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মিছিল নিয়ে আসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন। তিনি জানান, শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে সকাল থেকে ঢাকা-৫ নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করেছিলাম।

দিনভর রাজধানীজুড়ে মিছিল: এছাড়া রাজধানীর মিরপুরের সবুজবাংলা থেকে গুদারাঘাটে মিছিল করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাবিনা আকতার তুহিন। এ মিছিলে ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের নেতারা অংশ নেন।

মোহাম্মদপুর ৩২, ৩৩, ২৯, ৩১ ও ৩৪ শান্তি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা। এ সময় মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি এমএ সাত্তার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খসরু চৌধুরীর নেতৃত্বে উত্তরখান, দক্ষিণখান, কাশিবাড়ীতে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদের নেতৃত্বে সকালে থেকে ঢাকা-৮ নির্বাচনি এলাকায় মিছিল করে নেতাকর্মীরা। শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিকের নেতৃত্বে শ্যামপুর ওয়াসা গেট থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত মিছিল বের করা হয়। এ সময় থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী নুর হোসেন, তাজুল ইসলাম তাজু, কাউন্সিলর শফিকুর রহমান সাইদুল, গোলাম সরোয়ার মামুন, আজিজ আহমেদ, ছাত্রলীগের জিহাদ মাতব্বরসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী এতে অংশ নেন।

যুবলীগের শোভাযাত্রা : ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আসনভিত্তিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে (ঢাকা-৮ আসন) ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের উদ্যোগে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন শেখ ফজলে শামস্ পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচএম রেজাউল করিম রেজা।

আজ মাঠে থাকবে মুক্তিযোদ্ধারা : এদিকে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আবদুল আহাদ চৌধুরী ও সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রাজপথে থাকার আহবান জানিয়েছেন। তারা বলেন, ঢাকায় বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজ এলাকার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।

এই কর্মসূচি মনিটরিং করেন সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, কেএম মোজাম্মেল হক, আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক, আব্দুল করিম সরকার, মো. কায়কোবাদ, শাহাবুদ্দিন, নুর ইসলাম মোল্লা, কমান্ডার মোশারফ হোসেন, মো. শাহজাহান, আবুল বাসার, আহমেদ উল্ল্যা রতন, এবি সিদ্দিক মোল্লা, জামাল খাঁ।

Leave a Reply