হার্ড লাইনে ইসি, আশান্বিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ সারাদেশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারণা এখন তুঙ্গে। তবে গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা প্রচারণার বাধার শিকার হচ্ছেন, তাদের প্রচারণা করতে দলীয় প্রার্থীরা বাধা প্রদান করছেন এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ মাদারীপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

এ রকম পরিস্থিতি এবার হার্ড লাইনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতদিন কারণ দর্শাও নোটিশের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থীকে তলব করা হলেও এবার প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইসি। প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে নির্বাচন কমিশন জরিমানা ও প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে। যারা অস্থিতিশীল অবস্থা ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন করবেন, তাদের ক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স। গতকাল শনিবার সিরাজগঞ্জে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলীয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সহিংস হয়ে উঠেছে ভোটের পরিবেশ। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুজন নিহত ও বহুসংখ্যক আহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে চরম উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিন পর্যন্ত সহিংসতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। এ প্রেক্ষাপটে কমিশনের করণীয় নিয়ে গতকাল শনিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে তিনজন কমিশনারের উপস্থিতিতে অনির্ধারিত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান এতে অংশ নেন। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও কমিশনার রাশেদা বেগম ঢাকার বাইরে রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘হেভিওয়েট-লাইটওয়েট বলে কেউ নেই। বিধি লঙ্ঘন ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আজকের (গতকাল) বৈঠকে আমরা কিছু কঠোর সিদ্ধান্তের আলোচনা করেছি। আরও কিছু তথ্য চেয়েছি। তথ্য পেলেই প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্তে চলে যাব আমরা।’ নির্বাচন কমিশনের এমন কঠোরতা সিদ্ধান্তে আশান্বিত স্বতন্ত্ররা। তারা কমিশনের এ ধরনের সিদ্ধান্ত স্বাগত জানাচ্ছে এবং অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন।

ঝিনাইদহ-১ আসনের প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই দুটি মামলা হয়েছে। আরও চারটি মামলা করার সুপারিশ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই আসনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় শৈলকূপা ও হরিণাকুণ্ড থানার ওসিকে প্রত্যাহার করেছে ইসি। এরপরও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর আব্দুল হাইয়ের সমর্থকদের নৃশংসতা অব্যাহত রয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা-১ আসনের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে শোকজ, তলব ও জরিমানার পরও থামানো যাচ্ছে না। বারবার অনুসন্ধান কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রেখেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলার প্রক্রিয়া চলমান। এরপরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থীকে।

চট্টগ্রাম-১৬ আসনের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান গত ৩০ নভেম্বর শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের গালাগাল ও মারধর করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে নির্দেশ দেয় ইসি।

সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ক্যামেরা ভাঙচুরসহ ভোটারদের হুমকি-ধমকির ঘটনায় কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকে তিন দফা শোকজ করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এরপরও তিনি এলাকায় ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আচরণবিধি লঙ্ঘের অভিযোগে মাদারীপুর-৩ আসনের প্রার্থী আব্দুস সোবহান গোলাপকে ডেকে সতর্ক করে অনুসন্ধান কমিটি। গতকাল তার কর্মীদের হামলায় এসকেন্দার খাঁ নামে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এক কর্মী নিহত হন।

জানা গেছে, বাগে আনতে না পারা এসব প্রার্থীদের মধ্যে কারও কারও প্রার্থিতা বাতিল করার মতো বড় ধরনের সিদ্ধান্তের দিকে যেতে পারে নির্বাচন কমিশন।

Leave a Reply