এমপিদের নির্বাচনী সাজানো বাগানে ইসির থাবা

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সমস্ত এমপিরা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা তাদের এলাকা সাজিয়ে ছিলেন নিজেদের মতো করে। থানাগুলোর ওসি দিয়েছিলেন নিজের পছন্দের, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়েছিলেন একান্ত বিশ্বস্ত ও অনুগত। এমনকি ডিসি, এসপি পর্যন্ত নিজেদের বশীভূত রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তারা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই সমস্ত এমপিদের নির্বাচনী সাজানো বাগান তছনছ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন এই সমস্ত এমপিরা।

গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতেছিলেন এ রকম প্রায় দুইশ এমপি এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আওয়ামী লীগ ৭১ জনকে বাদ দিয়েছে, জাতীয় পার্টিও কয়েকজনকে বাদ দিয়েছে। আবার আওয়ামী লীগের মধ্যে যে ৭১ জন এমপি মনোনয়ন পাননি তাদের আবার ৬৩ জনই স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। অর্থাৎ দুইশর বেশি বর্তমান এমপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে। এমপিরা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের পক্ষে রাখার জন্য তৎপর ছিলেন। এই জন্য তারা কেউ ডিও দিয়েছেন। কেউ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেন দরবার এবং তদবিরও করেছেন। লক্ষ্য একটাই নির্বাচনে যেন প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আনুকূল্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর অধিকাংশ এমপি মনে করতেন যে, নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রশাসনের নির্ভরতার কোন বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পাশে রাখতে হবে। আর সে কারণেই তারা চেষ্টা তদবির করে নিজেদের পছন্দের লোককে থানার ওসি বানিয়েছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বানিয়েছিলেন। এমন একটা পরিকল্পনা ছিল যে তারা এই সমস্ত প্রার্থীদের জিতিয়ে দিতে সহায়তা করবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে এ রকম আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন এটা তারা কখনও ভাবতে পারেননি।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। কাজেই প্রশাসনে রদবদলের কি দরকার—এরকম একটি ধারণাই তাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন একদিকে যেমন ওসি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঢালাও বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্যদিকে জেলা প্রশাসকদের ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি রাখছে। ইতোমধ্যে দুজন জেলা প্রশাসককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে, যদি তারা কোন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অতিরিক্ত আনুগত্য দেখায় বা আনুকূল্য দেখায় সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তা বলাই বাহুল্য।

অন্যদিকে ওসিরাও এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বদলি হতে শুরু করেছেন। এর ফলে যারা নতুন ওসির দায়িত্ব নেবেন, তারা একদিকে যেমন পক্ষপাতিত্ব করবেন না, অন্যদিকে পক্ষপাতিত্বের প্রলোভন থাকলেও এ ধরনের ঝুঁকি নিতে নেবেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ফলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটি পথ সুষ্পষ্ট হয়েছে। কারণ যারা মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তারা কাউকে চিনবেন না এবং কারও পক্ষ অবলম্বন করবেন না বলেই ধারণা করা যেতে পারে।

তাছাড়া এবার নির্বাচনের সবচেয়ে বড় শক্তি হল স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কাজেই দুই পক্ষই আওয়ামী লীগ, দুই পক্ষের সঙ্গে সরকারের সমর্থন রয়েছে। একপক্ষে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়তে চাইবেন না কেউই। আর এ কারণেই এবার নির্বাচনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হস্তক্ষেপ মুক্ত হবে বলে অনেকে ধারণা করছেন। ফলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply