লাইসেন্স নয় ‘টোকেনে’ চলে পরিবহন, রাজস্ব হারাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন

বাংলা নিউজ ডেস্কঃ লাইসেন্স নয়, কুমিল্লা নগরীতে রিকশা, ইজিবাইক বা অটোরিকশা চলে টোকেনে। প্রকাশ্য-গোপনে এসব টোকেনের টাকা যায় চাঁদাবাজসহ- কথিত ‘প্রশাসন ম্যানেজকারীদে’র হাতে-বেহাতে। অন্যদিকে নগরীতে চলাচলের সাধারণ যানবাহনগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে না পারায় পরিবহন খাত থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। পরিবহন শৃঙ্খলাও ফেরানো যাচ্ছে না সড়কে।
আর ব্যাটারিচালিত পরিবহনকে লাইসেন্সের আওতায় আনার কোন আইন না থাকলেও- এসব যানবাহন ছাড়া সবই উঠে গেছে এখন। শহর ছেয়ে গেছে সড়কের ধারনক্ষমতার বেশি অবৈধ যানবাহনে।
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটিতে চলাচলের জন্য মাত্র ১ হাজার প্যাডেল রিকশার অনুমোদন রয়েছে। যেগুলো এখন পরিবর্তিত হয়ে পরিনত হয়েছে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশায়। নগরীর রাস্তায় যা চলছে অটোরিকশা, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা- সবই অবৈধ। এসব পরিবহনগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী ওই “টোকেনওয়ালারা”। রিকশা – অটোর পেছনে প্রকাশ্যে লেখা থাকে টাকার বিনিময়ে টোকেন প্রদানকারীদের নাম ও মোবাইল নম্বর। বেশ কয়েকজন অটোরিকশা- ইজিবাইক চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোথাও কোন সমস্যায় বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা পরলে এসব পরিবহন ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব নেয় টোকেনওয়ালারা। এজন্য মাসে টোকেন প্রতি নেয়া হয় সর্বনিম্ন ৩শ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬ শ টাকা। এই টোকেনই এসকল যানবাহনের মূল চালিকাশক্তি। আর টোকেন দিয়ে লেনদেন হওয়া টাকার কোন বৈধতা নেই।
সচেতন নাগরিক কমিটির সহ- সভাপতি আইরীন মুক্তা অধিকারী বলেন, লাইসেন্স বা নিবন্ধনের আওতায় না আনা হলে জানা যাবে না এ শহরের সড়ক কি পরিমান যানবাহন চলাচলের উপযোগী। লাইসেন্স নাই তাই এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন না থাকায়- দিনদিন সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। একই সাথে রাজস্বও হারাচ্ছে সিটি করপোরেশন। সকল পরিবহনকেই শৃঙ্খলায় আনতে নিবন্ধন জরুরী। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হাবিবুর আল আমিন সাদী জানান, অটোরিকশা-ইজিবাইক অবৈধ। সিটিতে চলাচলকারী যানবাহনের লাইসেন্স না থাকার কারণে সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব হারাচ্ছে। খুব অল্প সময়ের সকল পরিবহনগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। যারা টোকেনের নামে চাঁদাবাজি করেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমান জানান, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে নগরীতে চলাচলকারী পরিবহনের হালনাগাদ হয়েছে। মাত্র ১ হাজার প্যাডেল চালিত রিকশার লাইসেন্স আছে, আর কোন পরিবহনের লাইসেন্স প্রদানের আইন নাই।
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল হক টিপু জানান, নগরীতে কি পরিমান যানবাহন চলে, আমরা জানি না। লাইসেন্স আছে কি না তাও জানি না। আমরা নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করি। এখন যে পরিমান যানবাহন চলে এগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে হিমশিম খেতে হয়।

নগরীর রাস্তায় এখন যেসব যানবাহন চলে তাদের কোন অনুমতি বা নিবন্ধনই। চালকদেরও নাই কোন পরিবহন চালানোর প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা। যে কেউই চাইলে ভাড়া নিয়ে এসব যানবাহন নামিয়ে দিচ্ছে রাস্তায়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অন্যশহর থেকে আসা ভাসমান অপরিচিত মানুষ যে কেউ চালাতে পারেন এসব ইজিবাইক অটো রিকশা। এসব পরিবহনের চালকদের কারনে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা ও ছিনতাই। আর এসব দুর্ঘটনায় জড়িত চালক বা পরিবহন মালিক বেঁচে যান ওই টোকেনের জোরেই।
নগরীর বৈশাখী টেলিভিশনে কর্মরত বিশিষ্ট সাংবাদিক আনোয়ার হোসাইন বলেন, অটোরিকশা বা ইজি বাইক চালকদের কোন প্রশিক্ষণই নাই। তারা এলোমেলো ভাবে দ্রুত গতিতে চালান। ট্রাফিক আইন মেনে চলারা কোন প্রবনতা নেই। যে কারনে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। পঙ্গুত্ব বরন করতে হচ্ছে অনেককেই। আমিও ভুক্তভোগী।

নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশা চালক হযরত মিয়া জানান, আমার রিকশা ছিলো বাংলা রিকশা – যেটা পায়ে চালাইতে হত। লাইসেন্স ছিলো সিটি কর্পোরেশনের। এখন এসবের চলন নেই। সব ব্যাটারি দিয়ে চলতি, আমি ব্যাটারি লাগিয়েছি। ব্যাটারি লাগানোর পর – এখন সিটির লাইসেন্সের কোন দাম নাই- টোকেন নিয়া চলি।
একই এলাকার অটো চালক শফিকুল জানান, এখন কোন ড্রাইভারই চেনা যায় না, সব অপরিচিত। অটোরিকশা ছিনতাই বা যাত্রীদের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে- কারন ড্রাইভারের পরিচয় নাই।
উল্লেখ্য, প্রয়াত মেয়র আরফানুল হক রিফাত নির্বাচিত হবার পর সিটি কর্পোরেশনের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশ কয়েকবার সভা করা হয়। সেসব সভা থেকে সিদ্ধান্ত হয় দ্রুত সময়ের মধ্যে নগরীতে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে শৃঙ্খলায় ফেরানো হবে।

Leave a Reply