ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রোধে হাইকোর্টের সাত নির্দেশনা

বাংলা নিউজ ডেস্কঃভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রোধে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার সকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র বিভাগের দুই সচিব, আইনসচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন, সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সারাদেশের সব আদালতে এ নির্দেশ পাঠানোরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সাত দফা নির্দশনায় বলা হয়েছে, কোনো আদালত পরোয়ানা দিলে তা কার্যকরের আগে সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে নিশ্চিত হতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। যার বিরুদ্ধে পরোয়ানা কার্যকর করা হবে, তার মামলা নম্বর, বিচারকের স্বাক্ষর, সিল মোহর ঠিক কিনা তা যাচাই করতে হবে। কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে, পরোয়ানা প্রস্তুকারির সাথে মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে সত্যতা নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে বলেও আদেশে জানান হাইকোর্ট।

গত বছর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রোগ্রাম অফিসার আওলাদ হোসেনের ভুয়া পরোয়ানায় আটকের বৈধতা নিয়ে তার স্ত্রী হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলেন। এই রিটের ধারাবাহিকতায় উচ্চ আদালত এসব নির্দেশনা দেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে-

১. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর সময় পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৭৫ ধারার বিধান অনুসারে নির্ধারিত ফরম চাহিদা অনুযায়ী সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। যেমন: ক. যে ব্যক্তি বা যেসব ব্যক্তি পরোয়ানা কার্যকর করবেন, তার বা তাদের নাম, পদবি ও ঠিকানা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

খ. যার প্রতি পরোয়ানা ইস্যু করা হচ্ছে, অর্থাৎ অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, এজাহার বা নালিশ মামলা কিংবা অভিযোগপত্রে প্রণীত সংশ্লিষ্ট মামলার নম্বর ও ধারা এবং আদালতের মামলার নম্বর ও ধারা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

গ. সংশ্লিষ্ট বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরের নিচে নাম ও পদবির সিল এবং ক্ষেত্রমতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকের নাম ও পদবির সিলসহ বাঁম পাশে বর্ণিত সংশ্লিষ্ট আদালতের সিলসহ ব্যবহার করতে হবে।

ঘ. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তির নাম, পদবি ও মোবাইল ফোন নম্বরসহ সিল ও তার সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর ব্যবহার করতে হবে, যাতে পরোয়ানা কার্যকরকারী ব্যক্তি পরোয়ানার সঠিকতা সম্পর্কে কোনো সন্দেহের উদ্বেগ হলে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে সঠিকতা নিশ্চিত হওয়া যায়।

২. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুত করা হলে স্থানীয় অধিক্ষেত্র কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট পিয়নবইতে এন্ট্রি করে বার্তা বাহকের মাধ্যমে তা পুলিশ সুপারের কার্যালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাতে হবে। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের/থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক ওই পিয়নবইতে স্বাক্ষর করে তা বুঝে নিতে হবে। গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো ও কার্যকর করার জন্য পর্যায়ক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার কাজে লাগানো যেতে পারে।

৩. স্থানীয় অধিক্ষেত্র বাইরের জেলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করণের ক্ষেত্রে পরোয়ানা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সিলগালা করে এবং অফিসের সিলমোহর ছাপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠাবেন।

৪. সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিলমোহরকৃত খাম খুলে প্রাপ্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পরীক্ষা করে এর সঠিকতা নিশ্চিত করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ব্যবস্থা নেবেন। তবে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ক্ষেত্রে সন্দেহের উদ্রেক হলে পরোয়ানায় উল্লিখিত পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এর সঠিকতা নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।

৫. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য পরোয়ানা গ্রহণকারী কর্মকর্তা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পর তা কার্যকর করার আগে আবার পরীক্ষা করে যদি কোনও সন্দেহের উদ্রেক হয়, সেক্ষেত্রে পরোয়ানায় উল্লিখিত পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এর সঠিকতা নিশ্চিত হয়ে পরোয়ানা কার্যকর করবেন।

৬. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুসারে আসামিকে/আসামিদের গ্রেপ্তারের পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে ওই আসামি/আসামিদের আইন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট/জজ আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ উপস্থাপন করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট/গ্রেপ্তার আসামি বা আসামিদের জামিন না দিলে আদেশের কপিসহ হেফাজতি পরোয়ানা মূলে আসামি/আসামিদের জেল হাজতে পাঠানো ও ক্ষেত্রমতো সম্পূরক নথি তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুকারী জজ/ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবর পাঠাবেন।

৭. সংশ্লিষ্ট জেল সুপার কিংবা অন্য কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেফাজতি পরোয়ানামূলে প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট আসামি/আসামিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুকারী আদালতে এই মর্মে অবিলম্বে অবহিত করবেন যে, কোন থানার কোন মামলার সূত্রে বা কোন আদালতে কোন মামলায় বর্ণিত আসামিদের ওই আদালতের ইস্যুকৃত পরোয়ানামূলে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তীতে আসামিদের নতুন কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রাপ্ত হলে জেল সুপার ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে পরোয়ানা কার্যকর করবেন।

Leave a Reply